1. successrony@gmail.com : Mehedi Hasan Rony :
  2. arif_rashid@live.com : Arif Rashid : Arif Rashid
  3. meherunnesa3285@gmail.com : Meherun Nesa : Meherun Nesa
বুধবার, ২৭ মার্চ ২০২৪, ১১:২৬ অপরাহ্ন

রমজানে রোজা রাখবেন কেন?

দিনলিপি নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২২ এপ্রিল, ২০২০
  • ৫২৪ বার

ছোট্ট শিশুর অবুঝ মনের প্রশ্ন- আমরা কেন রমজান মাসে রোজা রাখি? সত্যিই তো! শিশু তো জানে না রমজান মাসের রোজা রাখার কারণ। শিশুরাই নয়, এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে বেরিয়ে আসবে চমকপ্রদ তথ্য- বড়দের অনেকেও জানেন না ছোট্ট শিশুর অবুঝ মনের এ প্রশ্নের উত্তর।

সংক্ষেপে বলতে গেলে এ প্রশ্নের উত্তর হলো-

– রোজা রাখি আল্লাহর ভয় অর্জনে জন্য, আল্লাহর একান্ত নিকটবর্তী বা আপনজন হওয়ার জন্য। বিগত জীবনের গোনাহ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। একনিষ্ঠতা ও সতর্কতার সঙ্গে রোজা রাখলে আল্লাহ মানুষের বিগত জীবনের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেন।

– ছোট্ট শিশুকে এ কথা বুঝিয়ে দেয়া জরুরি যে, রোজা রাখলে আল্লাহ বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন। আল্লাহর সন্তুষ্টি বান্দার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। রোজা কষ্টকর ইবাদত তাই আল্লাহ স্বয়ং রোজার প্রতিদান বা পুরস্কার দিয়ে থাকেন।

– রোজা রাখার মানে এটি নয় যে, আল্লাহ চান বান্দা রোজার (উপবাসের) মাধ্যমে কষ্ট ভোগ করুক। কয়েক ঘণ্টা খাবার-পানীয় গ্রহণ থেকে বিরত থাকা বেশি কষ্টকর নয়। খাবার-পানীয় গ্রহণ থেকে বিরত রাখাও আল্লাহর উদ্দেশ্য নয়।

বরং আল্লাহ দেখতে চান যে, বান্দা রোজার বিধান পালনে খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থেকে ছোট ছোট ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকার করে আল্লাহকে কতটুকু ভালোবাসেন।

রমজান মাস আসলেই অনেক ছোট্ট বাচ্ছা বাবা-মাকে এমন প্রশ্ন করে থাকেন। কারণ তারা দেখেন বাবা-মা বা বড়রা সারাদিন না খেয়ে রোজা পালন করে থাকেন। আবার অনেক সময় বাবা-মার দেখাদেখি তারাও রোজা পালন করার বায়না ধরেন। তারপরই তাদের অনেকের মধ্যে এ প্রশ্ন দেখা দেয়।

এবার ছোট্ট বাচ্ছাদের বলুন-

রোজা রাখা আল্লাহর হুকুম বা বিধান। আল্লাহ বান্দাকে সৃষ্টি করেছেন। তার সন্তুষ্টি অর্জনের মাসও এটি। এটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন নাজিলের মাস। সঠিক পথ লাভের মাস। রহমত ও বরকত লাভের মাস। গোনাহ থেকে মুক্তির মাস। আল্লাহকে ভয় করার মাধ্যমে তার সন্তুষ্টি অর্জনের মাস। এ রোজা রাখতে আল্লাহ এভাবে নির্দেশ দিয়েছেন-

‘রমজান মাস। এ মাসেই নাজিল করা হয়েছে কুরআন। যা মানুষের জন্য হেদায়েত। যা সৎপথের সুস্পষ্ট নিদর্শন এবং হক ও বাতিলের পার্থক্যকারী। অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে, সে যেন এ মাসে রোজা পালন করে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)

আল্লাহ তাআলা রোজা রাখার আরও কারণ বর্ণনা করেছেন এভাবে-
‘হে বিশ্বাসী (মুসলমানগণ)! তোমাদের জন্য রোজাকে ফরজ করা হয়েছে। যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের (নবি-রাসুলদের অনুসারীদের) জন্য ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমারা (রোজা রাখার মাধ্যমে) তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় (সন্তুষ্টি) অর্জন করতে পার।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)

রোজাদাদর ব্যক্তিই আল্লাহ তাআলাকে বেশি ভয় করে। যে ভয় তাকে দুনিয়ার সব অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে। আর তাইতো মহান আল্লাহর ভয় অর্জনের সেরা মাস এটি।

রোজা রাখার আরও কারণ হলো-

রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ বা রোকনের একটি। আল্লাহ বান্দাকে রমজান মাসে রোজা রাখতে বলেছেন তাই বান্দা রোজা রাখেন।

রমজানের রোজা শিশু, কিশোরসহ সবার মাঝে মানবিক এ অনুভূতি জাগ্রত করে-

গরিব-দুঃখী ও অসহায় মানুষের ক্ষুধার কষ্ট উপলব্দি করার মাস রমজান। রমজানের রোজা রাখলে সামান্য সময় উপবাসে যেমন ক্ষুধার কিছু কষ্ট উপলব্দি করা যায়। মানুষের মাঝে যেন এ অনুভূতি জাগ্রত হয় যে, যারা না খেয়ে দিনের পর দিন অতিবাহিত করে, তাদের ক্ষুধার কষ্ট কতবেশি!

রমজানের রোজার সুন্দর সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত তুলে ধরে রোজা রাখার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা-

– হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আন্তরিক বিশ্বাসের সঙ্গে আল্লাহর পুরষ্কারের আশায় রমজান মাসের রোজা পালন করেন আল্লাহ তাআলা তার বিগত জীবনের সব গোনাহ মাফ করে দেবেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)

– হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রোজা হলো ঢাল স্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মূর্খের মত কাজ করবে না। যদি কেউ তার সাথে ঝগড়া করতে চায়, তাকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুই বার বলে, আমি সওম পালন করছি। ওই আল্লাহর কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই রোজা পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহ্‌র কাছে মৃঘনাভীর চেয়েও উত্তম সুঘ্রাণ। সে আমার জন্য আহার, পান ও কামাচার পরিত্যাগ করে। সিয়াম আমারই জন্য। তাই এর পুরস্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশ গুন।’ (বুখারি)

– হজরত সাহল রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘জান্নাতের রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কেয়ামতের দিন শুধু রোজা পালনকারীরাই প্রবেশ করবে। তাদের ব্যতিত আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেয়া হবে- রোজা পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তারা ব্যতিত আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। যাতে করে এ দরজাটি দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে না পারে।’ (বুখারি)

সর্বোপরি কথা হলো-

রোজা আমরা কেন রাখি, এটি শুধু ছোটরাই নয়, অনেক বড়রাও এ কথা সুস্পষ্টভাবে জানেন না। আবার রমজানের নিয়ম-কানুন, গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কেও জানেন না অনেকেই। তাদের জন্য রমজান ও রমজানের রোজা সম্পর্কে জেনে নেয়া আবশ্যক।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর ছোট-বড় সবাইকে রমজান, রোজা রাখার কারণ, গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত জেনে যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। রোজার যথাযথ হক আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এ জাতীয় আরো সংবাদ