একমাত্র ছেলে প্রান্ত মিত্রকে (২৩) হারিয়ে যেন দুই চোখে অন্ধকার দেখছেন বাবা বিকাশ চন্দ্র মিত্র (৭০) ও মা পুতুল মিত্র (৬০)।
কাঁদতে কাঁদতে মা পুতুল মিত্র বলেন, ‘আমার ছাওয়ালডারে এমনভাবে খুন করা হইল শেষ কথাটাও আমারে কইয়া যাওয়ার পারলো না। কার এমন ক্ষতি আমার ছেলে করলো যে তারে খুন হইতে হইলো।’
বিকাশ মিত্রের বাড়ি রাজবাড়ী হলেও দীর্ঘদিন ধরে ফরিদপুর শহরে বসবাস করছেন। বর্তমানে আছেন শহরের ওয়ারলেস পাড়া এলাকার সুনীল কুমার দত্তের ভাড়া বাসায়। দিপশিখা নামের একটি কিন্ডারগার্টেন পরিচালনা করেন প্রান্তের বাবা।
প্রান্তের শেষকৃত্য শেষে মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) রাতেই তারা চলে আসেন ফরিদপুর সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের মালাঙ্গা গ্রামে প্রান্তের মামা বাড়িতে।
কলেজছাত্র প্রান্তের বাবা বিকাশ মিত্র বলেন, ‘শোকেরও তো একটা ধরন আছে। এটা কোন ধরনের শোক। বাবা হয়ে সন্তানের হত্যা আমি কীভাবে সইব। সব সময় ছেলের চাঁদমুখ চোখে ভাসে। মনে হয় প্রান্ত এই বুঝি সামনে এলো। কার কি ক্ষতি করেছিল আমার ছেলে। চিরকাল সমাজের জন্য কাজ করেছে। মানুষের উপকার করেছে। কারও রক্তের প্রয়োজন হলে রাত নেই দিন নেই ছুটে গেছে। আমাদের কোনো বারণ শোনেনি। শুধু সমাজের ভালোটাই চিন্তা করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছেলেকে কারা হত্যা করল, কেন হত্যা করল। কী অপরাধ ছিল তার। আমরা এখন কী নিয়ে বাঁচব। আমি হার্টের রোগী। কাঁদতে কাঁদতে ওর মা শয্যাশায়ী হয়ে গেছে। আমাদের এ সর্বনাশ কেন হলো।’
শয্যাশায়ী প্রান্তের মা পুতুল মিত্র কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘মানুষের জন্য রক্ত দিবার যাইয়া আমার কলিজাটা হারাই গেল। দশ টাকা, বিশ টাকা কইরা গুছাইয়া রাস্তার অনাহারী মানুষকে খাইয়েছে আমার বাবা। আমার খালি একটাই আশা যে আমার ছাওয়ালডারে যে খুন করছে তারে একটা নজর দেখবার পারতাম। ওদের বিচার চাই আমি।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৬ বছর ধরে শহরে ভাড়া থাকি। আমার একটাই আশা ছিল ছেলে-মেয়ে দুইডারে মানুষ করবো। অনেক কষ্ট কইরা ছেলেডারে থার্ড ইয়ার পর্যন্ত আনছি। নিজের কষ্ট কাউরে শেয়ার করি নাই। বুকে চাপা রাখছি। ছাওয়ালডারে এমনভাবে খুন করা হইল শেষ কথাটাও আমারে কইয়া যাওয়ার পারল না। দরকার হইলে তোরা আমারে খুন করতি, আমার ছাওয়ালডারে তোরা মারলি কেন।’
বিকাশ-পুতুল দম্পতির দুই ছেলে-মেয়ে। মেয়ে মনু মিত্রকে (৩০) বিয়ে দিয়েছেন। মনু বর্তমানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, প্রান্ত ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন প্রান্ত। মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) রাত ২টার দিকে বন্ধুর বোনকে রক্ত দিতে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন তিনি। পরে রাত আড়াইটার দিকে শহরের আলীপুর সেতুর উত্তর প্রান্ত এলাকায় সড়কের পাশ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার পুলিশ।