1. successrony@gmail.com : Mehedi Hasan Rony :
  2. arif_rashid@live.com : Arif Rashid : Arif Rashid
  3. meherunnesa3285@gmail.com : Meherun Nesa : Meherun Nesa
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৭:০৬ অপরাহ্ন

বিএনপি না এলে বিকল্প পথ নেবে আওয়ামী লীগ

দিনলিপি নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৩
  • ৪১ বার

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি না এলেও যেন নির্বাচন গ্রহণযোগ্য দেখানো যায়, সেই লক্ষ্যে কাজ করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তারা একাধিক বিকল্প পথ খোলা রাখতে চাইছে। বিএনপি বাদে অন্য নিবন্ধিত দলগুলোকে নির্বাচনে রাখতে বিশেষ চেষ্টা চলছে। অনিবন্ধিত দলগুলোকেও একাধিক জোটবদ্ধ করে নির্বাচনে অংশ নিতে উৎসাহ দিচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপির সঙ্গে আদর্শগত দূরত্ব আছে এমন দলগুলো যেন নির্বাচনে অংশ নেয়, সে চেষ্টা চলছে। বিএনপি না এলে কীভাবে ভোটার উপস্থিতি বাড়িয়ে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করা যায়, সেদিকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।

বিষয়টি নিয়ে রবিবারও (২২ অক্টোবর) আওয়ামী লীগের সংসদীয় বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনে দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসতে পারে। তবে এলেও তারা নির্বাচন বিতর্কিত করার চেষ্টা করবে। যদি না আসে, তাহলে আরও অনেক দল নির্বাচনে আসার জন্য প্রস্তুত আছে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘নির্বাচন যথাসময়ে সংবিধান মোতাবেক হবে। আমরা সব দলের সঙ্গে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই। বিএনপিকে বিশেষ করে দেখার কী আছে? বিএনপি ছাড়া অন্য কোনো দল নেই? জনগণের প্রতি যাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে, সেসব দল নির্বাচনে অংশ নেবে। তবে কারও জন্য নির্বাচন থেমে থাকবে না। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে অধিক মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আছে কি না, সেটা দেখার বিষয়। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। সেটাই আমাদের এখন লক্ষ্য।’

নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুসারে ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে ৩৯টি দল অংশ নেয়। ছবিসহ ভোটার তালিকা অনুযায়ী ৮ কোটি ১০ লাখ ৮৭ হাজার ৩ জন ভোটারের মধ্যে ৭ কোটি ৬ লাখ ৪৮ হাজার ৪৮৫ জন ভোট দেন। ভোট পড়ার হার ছিল ৮৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

২০০৮ সালের পর দুই নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ অনেকটা কমে যায়। ফলে ওই দুই নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে এখনো প্রশ্ন তোলা হয়। এমন বাস্তবতায় আগামী নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়ানোয় বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। তবে বিএনপি অংশ না নিলে ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ভোট বর্জনের মধ্যে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ১১টি অংশ নেয়। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে কয়েকটি রাজনৈতিক দল নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। তবে সে নির্বাচনে মাত্র ৮টি আসনে ঐক্যফ্রন্ট জয় পায়। এমন অভিজ্ঞতার পর আর আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে রাজি হচ্ছে না বিএনপি।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, পরপর দুটি জাতীয় নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম থাকায় এবার তা সন্তোষজনক পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান দলের নীতিনির্ধারকরা। ভোটার উপস্থিতির বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহল থেকেও চাপ রয়েছে। ফলে সব রাজনৈতিক দলকে ভোটে অংশ নিতে নানাভাবে যোগাযোগ করা হচ্ছে। বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে জোট থাকলেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান রয়েছে এমন একাধিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো হয়েছে।

আওয়ামী লীগের দলীয় একটি সূত্র জানায়, বিএনপির প্রয়াত নেতা নাজমুল হুদার দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। সম্প্রতি ওই দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই পদে এসেছেন বিএনপির সাবেক নেতা শমসের মোবিন চৌধুরী ও তৈমূর আলম খন্দকার। এই দল থেকে বিএনপির সাবেক কয়েকজন সংসদ সদস্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন।

এ বছর নিবন্ধন পাওয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) সঙ্গেও নানা মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছেন ক্ষমতাসীনরা। তারা যেন নির্বাচনে অংশ নেয়, সেটা অনেকটাই নিশ্চিত করা হয়েছে। ইসলামি দলগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে নির্বাচনে আনতে জোরালো চেষ্টা চলছে।

বিএনএমের সদস্যসচিব মেজর (অব.) মো. হানিফ বলেন, ‘নির্বাচনে আসব কি না, সেটা পরিবেশের ওপর নির্ভর করবে। মানুষ এবার ভোটকেন্দ্রে যাবে কি না, তাও দেখতে হবে। তার পরে সিদ্ধান্ত।’

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হলে আপনাদের দলের অবস্থান কী থাকবে, এর জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রস্তাব এলে আমরা অবশ্যই দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের সঙ্গে বসে এ বিষয়ে আলোচনা করব। সবার মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ইতোমধ্যে ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছে। বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, তাহলে আওয়ামী লীগের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হবে জাতীয় পার্টি।

জোটের বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘নির্বাচনের আগে জোট নিয়ে আলোচনা হয়ে থাকে। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে তাদের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে।’

ভোটের মাঠে ১৪-দলীয় জোটের নেতাদের সক্রিয় রাখতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জোটের একাধিক নেতাকে গণভবনে ডেকে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ১৪ দলের নেতাদের সারা দেশে সক্রিয় থাকতে বলেছেন তিনি।

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আরও বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা মনে করি, বিএনপি নির্বাচনে আসবে। তা ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনে না এলে তাদের সমর্থক ভোটারদের কীভাবে কেন্দ্রে আনা যায়, সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে।’

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, যদি বিরোধী দলগুলোর উপস্থিতি বাড়ে, তাহলে বিতর্ক হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে। তবে দলের লক্ষ্য সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন। ইতোমধ্যে বিরোধীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো হয়েছে। যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এমন দলের নেতাদের নির্বাচনমুখী করতে দেনদরবার হচ্ছে। দলীয় হাই কমান্ডের নির্দেশে কেন্দ্রীয় তিন নেতা এ বিষয় দেখভাল করছেন বলেও জানান তিনি।

এ জাতীয় আরো সংবাদ