1. successrony@gmail.com : Mehedi Hasan Rony :
  2. arif_rashid@live.com : Arif Rashid : Arif Rashid
  3. meherunnesa3285@gmail.com : Meherun Nesa : Meherun Nesa
বুধবার, ২৭ মার্চ ২০২৪, ১১:২২ অপরাহ্ন

পশ্চিমা প্লাস্টিক দূষিত করছে ইন্দোনেশিয়ার ‘খাদ্যচক্র’

দিনলিপি নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৯
  • ৫০৮ বার

বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের ধারায় শীর্ষ ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার নাম রয়েছে। আর দেশটির পরিবেশে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্লাস্টিক বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায়। এতে খাদ্যচক্র বিষাক্ত হয়ে উঠছে বলে জানা গেছে।

ইন্দোনেশিয়ায় পোড়ানো প্লাস্টিক বর্জ্যের সিংহভাগই আসছে পশ্চিমা কয়েকটি দেশ থেকে। খবর বিবিসি বাংলার

ইন্দোনেশিয়ার পরিবেশবাদী সংস্থা আইপিইএন পূর্ব জাভার একটি গ্রামে মুরগির ডিমে বিষাক্ত ডাইঅক্সিন পেয়েছে। ইউরোপিয়ান নিরাপত্তা মাত্রা অনুযায়ী ডিমে যে পরিমাণ ডাইঅক্সিন থাকা গ্রহণযোগ্য তার চেয়ে ৭০ গুণ বেশি ডাইঅক্সিন রয়েছে ডিমে।

দীর্ঘসময় ধরে এই রাসায়নিকের সংস্পর্শে থাকলে ক্যান্সারের সম্ভাবনা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া এবং শরীরে স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।

এই এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যারা প্লাস্টিক পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট ধোঁয়ার কারণে শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত সমস্যায় ভুগছেন। এছাড়া এমন ভিডিও ধারণ করা হয় যেখানে দেখা যায় যে ইন্দোনেশিয়ায় পুনর্ব্যবহার করার জন্য পাঠানো প্লাস্টিক উন্মুক্ত পরিবেশে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে।

আইপিইএনএর (ইন্টারন্যাশনাল পলিউশন এলিমিনেশন নেটওয়ার্ক) গবেষকরা পূর্ব জাভার সুরাবায়া অঞ্চল থেকে মুরগির ডিম সংগ্রহ করেন।

গবেষকরা জানান, ডাইঅক্সিনের মত জৈব দূষণকারী রাসায়নিক খাদ্য চক্রে প্রবেশ করেছে কিনা তা যাচাই করার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি ডিম পরীক্ষা করা।

সবচেয়ে ভয়াবহ দূষণ হতে দেখা গেছে ত্রোপোদো গ্রামে কয়েকটি টোফু (একধরণের দুগ্ধজাত খাদ্য) ফ্যাক্টরির পণ্যে। সেসব ফ্যাক্টরি জ্বালানির জন্য প্লাস্টিক পুড়িয়ে থাকে।

ইউরোপিয়ান ফুড সেফটি অথরিটির (ইএফএসএ) নির্ধারিত দৈনিক মাত্রা অনুযায়ী যে পরিমাণ ক্লোরিনেটেড ডাইঅক্সিন মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়, তার ৭০ গুণের বেশি রাসায়নিক মানবদেহে প্রবেশ করে ঐ অঞ্চলের একটি ডিম খেলেই।

ডিমগুলোতে বিষাক্ত রাসায়নিকও (এসসিসিপি এবং পিবিডিই) পাওয়া গেছে, যা প্লাস্টিকে ব্যবহার করা হয়।

ত্রোপেদো শহরের একজন বাসিন্দা বলেন তারা ডাক্তারের কাছে গেলে রোগের বিবরণ না দিয়ে শহরের পরিচয় দিলেই ডাক্তার রোগের ধরণ বুঝতে পারেন।

ত্রোপোদোকে ধোঁয়ার শহর বলা হয়। আমরা ডাক্তারের কাছে গিয়ে শহরের নাম বললেই তারা বুঝতে পারেন যে কিসের চিকিৎসা করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কয়েকটি বিষাক্ত ডিম খাওয়ার ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি না হলেও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির মাত্রা হতে পারে মারাত্মক।

ইন্দোনেশিয়ার একজন শীর্ষ পরিবেশবিদ ইয়ুইয়ুন ইসমাওয়াতি, যিনি ডিম পরীক্ষা করা গবেষকদের দলে ছিলেন, জানান ইন্দোনেশিয়ায় এরকম পরিস্থিতি এর আগে তৈরি হয়নি।

আমাদের গবেষণায় পাওয়া ফলাফল খুবই আশঙ্কাজনক। এ ধরণের ফল এর আগে কখনো পাইনি আমরা।

ইন্দোনেশিয়ান ইন্সটিটিউট অব সাইন্সেস এর ড. আগাস হারইয়োনো মন্তব্য করেন যে আন্ত:দেশীয় প্লাস্টিক বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ রাখতে সরকারের এমন অবকাঠামো প্রস্তুত করা প্রয়োজন যার মাধ্যমে ক্রমাগত জৈব দূষণকারী উপাদানের পরিমাণ পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে।

গবেষণায় পূর্ব জাভায় একটি কাগজের কারখানার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে।

ঐ কারখানার প্রায় ৪০ ভাগ কাগজই আমদানিকৃত হলেও নিম্নমানের প্লাস্টিক দ্বারা দূষিত।

বা্ঙ্গুন গ্রামের একজন ‘প্লাস্টিক চাষী’ সুপিয়াতি বলেন, তিনি বিভিন্ন রকমের প্লাস্টিক বর্জ্যের মধ্য থেকে অপেক্ষাকৃত ভাল মানের প্লাস্টিক আলাদা করে কারখানায় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

গত বছর ইন্দোনেশিয়ায় প্লাস্টিক বর্জ্য আমদানির হার ১৪১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লক্ষ ৮৩ হাজার টনে। ইন্দোনেশিয়ার পরিসংখ্যান অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে মূলত আমদানি করা হয় এই প্লাস্টিক।

২০১৭ সালের শুরুতে চীন তাদের দেশে বর্জ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে, যার ফলে অন্যান্য দেশে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য সরবরাহ করা শুরু হয়।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিটার ডবসন বলেন যেসব পশ্চিমা দেশ প্লাস্টিক বর্জ্য রপ্তানি করে তাদেরকেও দায়বদ্ধ করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ইন্দোনেশিয়ায় প্লাস্টিক দূষণ সমস্যার একটি অন্যতম অংশ পশ্চিমা দেশগুলো থেকে রপ্তানি করা বর্জ্য।

বর্জ্য সংগ্রহের জন্য অবকাঠামো এবং অর্থায়নের অভাবকে কারণ মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

জাভার বিপরীতের অঞ্চল সিনদাং জায়ার স্থানীয় প্রধান মাসরুর দাবি করেন যে প্লাস্টিক পুড়ানোর ফলে তৈরি হওয়া ধোঁয়ায় অসংখ্য মানুষকে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যায় ভুগতে দেখেছেন তিনি।

মিলা দামিলা নামের এক নারী জানান তার নাতনিকে চারবার হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।

এলি প্রিমা নামের আরেক বাসিন্দা বলেন তার মেয়েকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে অক্সিজেন দিতে হয়েছে। তবে প্লাস্টিক ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনার পর উন্মুক্ত স্থানে প্লাস্টিক পোড়ানো অনেকাংশে কমেছে।

পাশাপাশি, সরকারি নীতিও যে এর পেছনে কিছুটা ভূমিকা রাখছে, তেমনটিও মনে হচ্ছে।

এখনও কেউ কেউ বর্জ্য পোড়ায় ঠিকই, কিন্তু সিনদাং জায়ায় বর্জ্য আমদানি প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে।

তবে ইন্দোনেশিয়ায় কম পরিমাণ বর্জ্য প্রবেশ করলেও এর চূড়ান্ত পরিণতি কী হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

বাসেল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, অনেক বর্জ্যের কন্টেইনার যেগুলো পশ্চিমা দেশে ফেরত পাঠানোর কথা ছিল পশ্চিমে ফেরত না গিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশে জায়গা পাচ্ছে।

এ জাতীয় আরো সংবাদ