চীনের প্রযুক্তি কোম্পানি শাওমি এমন একটি মোবাইল হ্যান্ডসেট বাজারে ছেড়েছে যেটিতে আছে ১০৮ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা।
কোনো জনপ্রিয় স্মার্টফোনে এত হাই রেজ্যুলেশনের ক্যামেরা এই প্রথম।
শাওমির স্মার্টফোনে যুক্ত এই ক্যামেরার সেন্সর প্রস্তুত করেছে স্যামসাং। এরকম সেন্সর স্যামসাং এখনো পর্যন্ত তাদের নিজেদের তৈরি করা স্মার্টফোনেই ব্যবহার করেনি।
তারা দাবি করছে, এই ক্যামেরায় খুবই ঝকঝকে এবং সুস্পষ্ট ছবি তোলা যায়। সূত্র: বিবিসি বাংলা
তবে এই ক্যামেরায় তোলা ছবিতে ডিজিটাল বিকৃতি অনেক বেশি। এর চেয়ে অনেক কম রেজ্যুলেশনের ক্যামেরায় তোলা ছবির ডিজিটাল বিকৃতিও এত বেশি নয়।
আপাতত এমআইসিসি নাইন-প্রো-প্রিমিয়াম ফোনটি শুধু চীনের বাজারেই ছাড়া হবে। সেখানে এই ফোনটির প্রাথমিক মূল্য রাখা হয়েছে ২ হাজার ৭৯৯ ইউয়ান (৪০০ মার্কিন ডলার)।
তবে শাওমি জানিয়েছে তারা একই প্রযুক্তি এমআই-নোট-টেন’এ ব্যবহার করবে ।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যানালিসের তথ্য অনুযায়ী, স্মার্টফোন বিক্রির দিক থেকে শাওমি এখন বিশ্বে চার নম্বরে। স্মার্টফোনের বাজারে তাদের শেয়ার ৯ দশমিক ১ শতাংশ।
ইউরোপে শাওমির ফোনের বিক্রি দ্রুতগতিতে বাড়ছে। ২০২০ সালের মধ্যে জাপানের বাজারে প্রবেশ করার পরিকল্পনাও তারা ঘোষণা করেছে।
মিশে যাওয়া পিক্সেল
এতদিন পর্যন্ত ১০০ মেগাপিক্সেলের বেশি শক্তিশালী সেন্সর শুধু মিডিয়াম ফরম্যাট ডিজিটাল ক্যামেরাতেই দেখা গেছে। এসব ক্যামেরার দাম অনেক বেশি।
ছোটো একটি স্মার্টফোনের মধ্যে এরকম অতি উচ্চমাত্রার রেজ্যুলেশনের সেন্সর বসানোর একটা বিপদ আছে। যখন একটি পিক্সেলের খুব কাছে আরেকটি পিক্সেল বসানো হয়, তাদের একটির বৈদ্যুতিক সংকেত আরেকটির ওপর গিয়ে পড়ে। এটিকে বলা হয় ক্রসটক। এতে করে ক্যামেরায় তোলা ছবিতে বিকৃতি অনেক বেশি ঘটে।
স্বল্প আলোতে তোলা ছবি ভালো হয় না
স্মার্টফোনের ক্যামেরায় যখন এরকম সেন্সর লাগানা হয়, তখন প্রতিটি পিক্সেলকে স্বাভাবিক আকারের চেয়ে ছোট হতে হয়, যাতে করে সব পিক্সেলের জায়গা হয়। এতে করে পিক্সেলগুলো যথেষ্ট আলো পায় না। ফলে এই ক্যামেরায় স্বল্প আলোতে ছবি তোলা নিয়ে সমস্যা হয়।
শাওমির নতুন ফোনে লাগানো স্যামসাংয়ের আইসোসেল প্লাস সেন্সর সমস্যাটি কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। অন্যান্য স্মার্টফোনের সেন্সরের চেয়ে এই সেন্সরের আকার বড়।
এই প্রযুক্তিতে যেটা নতুন, তা হলো,এখানে প্রতি চারটি পিক্সেলকে একটি করে গ্রুপে ফেলে সাজানো হচ্ছে। এই চারটি পিক্সেল লাল, সবুজ এবং নীল রঙ সনাক্ত করতে একই ধরণের কালার ফিল্টার শেয়ার করবে।
অর্থাৎ এই চারটি পিক্সেল একসঙ্গে একটি পিক্সেলের মতই আচরণ করবে। ফলে ক্যামেরায় তোলা ছবিটা হবে কার্যত ২৭ মেগাপিক্সেলের।
তবে ছবি তোলার সময় যদি যথেষ্ট আলো থাকে, তখন কেউ চাইলে ক্যামেরার সেটিং বদল করে ১০৮ মেগাপিক্সেলের ছবিই তুলতে পারে।
ডিজাইনে দুর্বলতা
এই ফোনটি বাজারে আসার আগেই সেটি পরীক্ষা করে দেখার সুযোগ পেয়েছিল রিভিউ ওয়েবসাইট ডিএক্সও মার্ক।
তারা এই ফোনটির কিছু দুর্বলতার কথা উল্লেখ করছে। প্রথমত, এটি দিয়ে তোলা ছবির মান অন্য খুবই উচু মানের ক্যামেরায় তোলা ছবির চেয়ে খারাপ।
এই ফোন দিয়ে খুব উজ্জ্বল আলো বা ছায়াময় স্থানে ছবি তুললে সেটার মানও অত ভালো হয় না।
আরেকটি সমস্যা হচ্ছে ১০৮ মেগাপিক্সেলে ছবি তুললে তা ফোনের মেমোরির অনেক বেশি জায়গা দখল করবে। আর এরকম ছবি এডিটের ক্ষেত্রেও প্রসেসরের শক্তিক্ষয় বেশি হবে।
তবে এই ফোনে টেলিফোটো পোর্ট্রেট, ওয়াইড অ্যাঙ্গেল ল্যান্ডস্কেপ ও ম্যাক্রো ক্লোজ আপ শটের জন্য কম রেজোলিউশনের আলাদা সেন্সর আছে।
ব্যাবসায়িক কৌশল!
শাওমি এর আগে সেপ্টেম্বরে এমআই মিক্স আলফা ফোনেও ১০৮ মেগাপিক্সেল সেন্সর ব্যবহারের কথা ঘেোষণা করেছিল।
কিন্তু এই ফোনটি উচ্চ ক্রয়ক্ষমতার ভোক্তাদের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে। এর দাম রাখা হয়েছে ১৯ হাজার ৯৯৯ ইউয়ান (২ হাজার ৮৫৬ মার্কিন ডলার)। ডিসেম্বরের আগে এই সেটটি বাজারে আসার সম্ভাবনা নেই।
প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান সিসিএস ইনসাইট কনসাল্টেন্সি’র একজন বিশেষজ্ঞ বেন উড মনে করেন এই ক্যামেরার কারণে শাওমির দুটি স্মার্টফোন বাজারে নজর কাড়বে।
“স্মার্টফোন কোম্পানিগুলো মানুষকে চমক দিতে অনেক কিছুই করতে প্রস্তুত। অতি উচ্চ মেগাপিক্সেলের এই ক্যামেরা মানুষের মনোযোগ আকর্ষণেরই চেষ্টা।”
তবে মি. উড মনে করেন বেশি মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা হলেই যে তা দিয়ে সবসময় সবচেয়ে ভালো মানের ছবি তোলা সম্ভব হবে, এমনটিও নয়।
“কিন্তু তারপরও অনেক ক্রেতার ধারণা, কোন ক্যামেরার মেগাপিক্সেল যত বেশি হবে, সেটি তত উন্নত মানের।”