লক্ষ্যটা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল, ১৬৩ রানের। শুরুতেই উইকেট হারিয়ে বিপদেই পড়ে গিয়েছিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। তবে ইমরুল কায়েসের বিধ্বংসী আর দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে সেই বিপদ কাটিয়ে দারুণ এক জয় তুলে নিয়েছে দলটি। মিরপুরে চলতি বিপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে সিলেট থান্ডার্সকে ৫ উইকেট আর ১ ওভার হাতে রেখেই হারিয়েছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স।
রান তাড়ায় নেমে ২০ রানের মধ্যেই জুনায়েদ সিদ্দিকী (৪) আর নাসির হোসেনকে (০) হারিয়ে বসে চট্টগ্রাম। ঝড় তুলতে চাওয়া আভিষ্কা ফার্নান্ডোও ২৬ বলে ৩৩ রান করে সাজঘরে ফেরেন। তারপর রায়ান বার্লও (৩) ফিরে গেলে ৬৪ রানে ৪ উইকেট খুইয়ে বিপদে পড়ে চট্টগ্রাম।
সেই বিপদ থেকে দলকে উদ্ধার করেছেন চার নম্বরে নামা ইমরুল কায়েস। পঞ্চম উইকেটে চ্যাডউইক ওয়ালটনকে নিয়ে ৫২ বলে ৮৬ রানের ম্যাচ জেতানো এক জুটি গড়েছেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
৩৮ বলে ২ বাউন্ডারি আর ৫ ছক্কায় ৬১ রানের ঝড় তুলে শেষ পর্যন্ত ইমরুল ফিরেছেন ইবাদত হোসেনের শিকার হয়ে। ততক্ষণে অবশ্য জয় বলতে গেলে নিশ্চিতই হয়ে গেছে চট্টগ্রামের। ১৪ বলে দরকার তখন ১৩ রান। ওয়ালটন ৩০ বলে ৪৯ রানে অপরাজিত থাকেন।
এর আগে জনসন চার্লসের শুরুর ব্যাটিংয়ের পর মোহাম্মদ মিঠুনের ঝড়ো ফিফটিতে ভর করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৬২ রান তুলে সিলেট থান্ডার্স।
দলের কোচ হার্শেল গিবস আগেরদিনই (মঙ্গলবার) বলেছিলেন, বড় তারকা না থাকাই তার দলের প্রধান শক্তি। কারণ এতে দলের অন্যান্য খেলোয়াড়রা স্বাধীনভাবে খেলতে পারে। ঠিক এই জিনিসটিই যেনো দেখা গেলো সিলেটের প্রথম ম্যাচে। তিন নম্বরে নেমে দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছেন মিঠুন। দারুণ টাইমিংয়ের প্রদর্শনী করে মাত্র ৪৮ বলে খেলেছেন ৮৪ রানের অপরাজিত ইনিংস। যেখানে ছিলো ৪টি চারের সঙ্গে ৫টি ছয়ের মার।
তবে চট্টগ্রাম অধিনায়ক এমরিটের আমন্ত্রণে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ঠিক মনঃপুত করতে পারেনি সিলেট। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই রুবেল হোসেনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ওপেনার রনি তালুকদার। দলের রান তখন মাত্র ৫। রনিও করেন ঠিক এই ৫ রান।
শুরুতেই উইকেট হারালেও সহজাত ব্যাটিং করতে পিছপা হননি আরেক ওপেনার চার্লস। প্রতিপক্ষ অধিনায়ক এমরিটকে টানা ৪টি চার মেরে শুরু করেন, থামেন নাসুম আহমেদের করা সপ্তম ওভারের শেষ বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে। এর মাঝে ২৩ বলে ৭টি চারের মারে ৩৫ রান করেন চার্লস।
বেশিক্ষণ উইকেটে থাকতে পারেননি লঙ্কান অলরাউন্ডার জীবন মেন্ডিস। ইনিংসের নবম ওভারে দলীয় ৬১ রানের মাথায় মাত্র ৪ রান করে ফেরেন তিনি। যার ফলে নবম ওভারের পঞ্চম বল থেকে একসঙ্গে জুটি বাধেন সিলেট অধিনায়ক মোসাদ্দেক ও তিন নম্বরে নামা মিঠুন। যা থামে ইনিংসের শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে।
মোসাদ্দেককে সঙ্গে পেয়েই যেনো আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের সাহস পেয়ে যান মিঠুন। দশম ওভারের পঞ্চম বলে মুকতার আলির ডেলিভারিকে উড়িয়ে পাঠান বাউন্ডারির ওপারে। যা কি না ছিল টুর্নামেন্টের প্রথম ছক্কা।
এক ওভার পর নাসুমের শেষ ওভারে আরও তেতে ওঠেন তিনি। সে ওভারের ছয় বলে ৩টি ছক্কার সঙ্গে নেন ৩টি ডাবলস। যার ফলে ২২ বলে ২২ থেকে এক লাফে পৌঁছে যান ২৮ বলে ৪৬ রানে। এ ওভারে মিঠুনের একটি কঠিন ক্যাচ ছেড়ে দেন জুনায়েদ সিদ্দিকী।
পরের ওভারেই নাসির হোসেনকে এক্সট্রা কভারের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে মাত্র ৩০ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের নবম ফিফটি তুলে নেন মিঠুন। ব্যক্তিগত অর্ধশতক করা পর্যন্ত একটিও চার মারেননি তিনি। তবে পঞ্চাশ পেরিয়ে যাওয়ার পরে তার ব্যাট থেকে আসে ৪টি চারের মার।
এদিকে মিঠুন যখন মারমুখী ব্যাটিং করছিলেন, তখন বেশ রয়েসয়েই খেলছিলেন অধিনায়ক মোসাদ্দেক। ইনিংসের শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে ১টি করে চার ও ছয়ের মারে ৩৫ বলে ২৯ রান করেন তিনি। শেষপর্যন্ত অপরাজিতই থেকে যান মিঠুন। ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ইনিংসে মাত্র ৪৮ বলে ৪ চার ও ৫ ছয়ের মারে ৮৪ রান করেন তিনি।
চট্টগ্রামের পক্ষে বল হাতে ২৭ রান খরচায় ২ উইকেট নেন রুবেল হোসেন। এছাড়া নাসুম আহমেদ ও রায়াদ এমরিটের ঝুলিতে যায় ১টি করে উইকেট।
সূত্র : জাগো নিউজ