আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে যেসব নেতার নাম এসেছে তাতে তুলনামূলকভাবে প্রশংসিত ৫ নেতার নাম নেই। এই ৫ নেতাই দলের গত কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার পাশাপাশি মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের মধ্যে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম ছিলেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছিলেন। অন্যদিকে গণপূর্তমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম ছিলেন দলের আইনবিষয়ক সম্পাদক এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা দলের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তাদের কেউ পদ না পেলেও দলে নতুন করে ঠাঁই পেলেন সাম্প্রতিক ইস্যুতে বিতর্কিত নেতা সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান। ফলে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে যে শুদ্ধি অভিযান চলছে সেই যাত্রাপথে এই কমিটি ভিন্ন আলোচনার জন্ম দিল কিনা এ বিষয়ে কানাঘুষা চলছে। তবে দল থেকে বাদ পড়া নেতাদের এ নিয়ে কোনো
নেতিবাচক বক্তব্য নেই। বরং তারা নেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রেখেই কথা বলছেন। গতকাল রবিবার আওয়ামী লীগের সদ্য ঘোষিত আংশিক কমিটির বিষয়ে আমাদের সময়ের পক্ষ
থেকে জানতে চাওয়া হলে তারা জানান, নেত্রী জেনেবুঝেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সুতরাং নেত্রী শেখ হাসিনা তাদের দলের যে জায়গায় ঠাঁই দেবেন সেখানে থাকতে দ্বিধা নেই বলেও জানান তারা।
আওয়ামী লীগের সদ্য বিদায়ী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম আমাদের সময়কে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কমিটিতে যারা জায়গা পেয়েছেন তারা খুবই যোগ্য। আমার দৃঢ় বিশ্বাস তারা আওয়ামী লীগ সভাপতি, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভালো কাজ করবেন।’
আওয়ামী লীগের সদ্য বিদায়ী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী কাউন্সিলরদের অনুমতি নিয়ে বর্তমান কমিটি দিয়েছেন। তিনি দলের কোনো কোনো পদ এখনো খালি রেখেছেন এবং এখন পর্যন্ত কমিটিতে যারা ঠাঁই পেয়েছেন তারা তুলনামূলকভাবে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। আমি মনে করি জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তারা দলে অবদান রাখবেন।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সদ্য বিদায়ী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘বাংলাদেশের অভিভাবক, আমাদের এই বিশাল আওয়ামী পরিবারের অভিভাবক শেখ হাসিনা। তিনি সময়-কাল ভেদে আমাদের একেকটি রাজনৈতিক দায়িত্ব একেক সময় বণ্টন করেন। কখনো দলের, কখনো সরকারের, আবার কখনো কর্মী হিসেবে দলের প্রচারের জন্য দায়িত্ব দেন। যখন যেই দায়িত্ব তিনি দেবেন, সেটা পালনই আমাদের কাজ।’ নওফেল বলেন, আমি এখন সংসদ সদস্য, আবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উপমন্ত্রীর দায়িত্বপ্রাপ্ত। নেত্রী তিন বছর আগে সাংগঠনিক সম্পাদক করেছিলেন। এখন এই সরকারি দায়িত্ব দিয়েছেন, আবার সিদ্ধান্ত নেবেন ভবিষ্যতে, যা সেই সময় প্রয়োজন হবে সেটা বিবেচনায়।
শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক জ্ঞান চর্চা আর স্বীয় পেশাগত উন্নয়নে কাজ করতে হবে, যদি রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে নিজের পরিচয় দিতে চাই। রাজনীতি কোনো অর্থনৈতিক বা পেশাগত সম্পদ নয়, যাতে শুধুই প্রমোশন হয় আর স্থায়ী কাজ বা দায়িত্ব থাকে। রাজনীতি কোনো বৃত্তি নয়, এটি একটি আদর্শিক চেতনার জায়গা। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই দেশকে এগিয়ে দিতে, যার যার জায়গা থেকে আমাদের সক্রিয় হতে হবে, নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে সেই আদর্শিক অবস্থান থেকে, কে, কী দায়িত্বে আছি সেটা বড় কথা নয়।’
শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা জ্ঞাপন করে দলের বিদায়ী কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক, গণপূর্তমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যেসব নেতা দলে বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পেয়েছেন তারা খুবই যোগ্য। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে দলের সম্পাদকম-লীতে জায়গা দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে দলীয় মনোনয়ন দিয়ে জাতীয় সংসদে জায়গা দিয়েছেন, মন্ত্রী বানিয়েছেন। সে কারণে তার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার অন্ত নেই। নেত্রী সব সময়েই সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত নেন। সুতরাং দল ও সরকারের প্রয়োজনে সর্বস্ব দিয়ে নেত্রীর নির্দেশ পালন করব।’
বরাবরেই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রেখে পথ চলেন ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। তার ভাষ্য, তিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। পদ পেলেও আওয়ামী লীগে থাকবেন, না পেলেও থাকবেন। এ নিয়ে ভিন্ন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই তার।