নিজের দামি ঘড়ির বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা প্রশ্নবিদ্ধ ও অপর্যাপ্ত বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। মন্ত্রীর ওই ঘড়িগুলো কেন রাষ্ট্রীয় তোশাখানায় জমা হলো না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সংস্থাটি।
গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এ প্রশ্ন তোলেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ঘড়ি নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে সুইডেনভিত্তিক নিউজ পোর্টাল নেত্র নিউজ। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মন্ত্রীর ব্যবহৃত রোলেক্স ডে-ডেট প্রেসিডেন্ট মডেলের ওই ঘড়ির দাম ২৮ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। ওই নিউজে মন্ত্রীর আরও কয়েকটি দামি ঘরির কথা তুলে ধরা হয়েছিল।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমার যত ঘড়ি আছে একটাও আমার নিজের না, পয়সা দিয়ে কেনা নয়। আপনি বিদেশে গেলেন, এসে আমাকে একটা ঘড়ি দিলেন, আমি নিলাম। এই রকম আপনি যদি নিয়ে আসেন, আমাকে উপহার দেন, আমি কী করব। এটা গিফট আইটেম, এটা আমার নিজের নয়।’
তবে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদকের দামি ঘড়ি সংগ্রহের বিষয়ে দেওয়া ব্যাখ্যাকে প্রশ্নবিদ্ধ ও অপর্যাপ্ত বলছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘এসব সামগ্রী কেন যথানিয়মে ও যথাসময়ে রাষ্ট্রীয় তোশাখানায় জমা দেওয়া হলো না, তা দেশবাসীকে জানানো প্রয়োজন।’
এ সময় মন্ত্রীর সংগৃহীত এ ধরনের উপহার কি ঘড়িতেই সীমাবদ্ধ, এরূপ সংগ্রহ কি শুধু সড়ক ও সেতুমন্ত্রীরই, নাকি এর স্বরূপ ও বিস্তৃতি আরও ব্যাপক ও গভীর, তা খতিয়ে দেখে দেশবাসীকে জানাবার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
টিআইবি বিবৃতিতে বলেছে, মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উপহারসমূহ যেভাবেই পেয়ে থাকুন; ২০১২ সালের জুনে হালনাগাদকৃত তোশাখানা বিধি ১৯৭৪ অনুযায়ী উপহারসমূহ যথাসময়ে তোশাখানায় জমা দেওয়া হলো না কেন? জমা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত যেহেতু তিনি নিয়েছেন সেহেতু সংশ্লিষ্ট ধারা অনুসরণ করে উপহার প্রাপ্ত বস্তুর প্রকৃত মূল্য অনুযায়ী অর্থ রাষ্ট্রীয় কোশাগারে জমা দেওয়া হয়েছে কী না? এ ধরনের প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর জানার অধিকার জনগণের রয়েছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘সরকারের অন্যতম প্রভাবশালী মন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক অবস্থানে থেকে তিনি কি অন্যদের স্থাপিত দৃষ্টান্ত অনুসরণ করলেন, নাকি অন্যদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করলেন?’
কোনো কন্ট্রাক্টরের কাছ থেকে ওবায়দুল কাদের উপহার নেন না। বরং তার কার্যালয়ে কোনো কন্ট্রাক্টরকে বসতেও দেন না বলে গতকালের সংবাদ সম্মেলনে জানান। এ বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হওয়া অমূলক নয় মন্তব্য করেন ইফতেখারুজ্জামান। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘ঠিকাদারেরা নির্বাচনের সময় “একটা এমাউন্ট” দিতে চেয়েছিল, যা তিনি গ্রহণ করেননি। তার মতো গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থেকে সেসব ঠিকাদারদের এ ধরনের অনৈতিকতা ও দুর্নীতির চর্চা প্রতিরোধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে? কাউকে কী তালিকাভুক্ত করা হয়েছে? না কী কমপক্ষে জনস্বার্থে তাদের তালিকা প্রকাশ করা হবে?’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘বিষয়গুলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা এবং নিজের দলের নেতাকর্মীসহ কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না-এই অঙ্গীকারের সঙ্গে কি সামঞ্জস্যপূর্ণ বিবেচিত হবে?’ তিনি মনে করেন, এসব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার মতো সৎ সাহসের দৃষ্টান্ত সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধু শতবর্ষ উদ্যাপন কার্যক্রমের শুরুর লগ্নে স্মরণ করা অযৌক্তিক হবে না, তোশাখানা বিধি জাতির পিতার নেতৃত্বাধীন সরকার কর্তৃক প্রণীত হয়েছিল, বর্তমান সরকারের আমলে হালনাগাদ হয়েছে, আর নভেম্বর ২০১৮ সালে তোশাখানা জাদুঘর উদ্বোধন করা হয়েছিল।