1. successrony@gmail.com : Mehedi Hasan Rony :
  2. arif_rashid@live.com : Arif Rashid : Arif Rashid
  3. meherunnesa3285@gmail.com : Meherun Nesa : Meherun Nesa
শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৪৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম:

কুবলয়- পঞ্চম পর্ব

সিফাত হালিম, ভিয়েনা, অস্ট্রিয়া।
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
  • ৯৮৮ বার

মোক্তার সাহেবের দপ্তরে ঢোকার কিছুকাল পরে একটা কেসে জনৈক এক ভারতীয় মুসলমানের সঙ্গে আইজউদ্দীনের পরিচয় ও সখ্যতা ঘটে। ব্যাক্তিটির নাম জনাব লুৎফর রহমান। যে সময়ের কথা হচ্ছে, তখন উভয় দেশের সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত কিছু লোক চৌকির প্রহরা ফাঁকি দিয়ে নিয়মিত সাধারণ লোকজন ও মালামাল এপার ওপার করে দেয়। অনেকটা পেশাদার দালাল তারা। টাকার বিনিময়ে কাজ করে। তখন পূর্ব পাকিস্তান ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের শাসনাধীন। অনেকেই দালালের সহায়তা নিয়ে বিনা পাসপোর্টেও যাতায়াত করে।অবশ্য আজও ব্যবস্থাটা চালু আছে। সীমান্তে নজরদারি কড়াকড়ি হলে থামে কিছুটা । তারপর যা তাই হয় ।

একদিন সকালে লুৎফর রহমান তার অনূঢ়া ভগ্নিকে নিয়ে ভারত থেকে লুকিয়ে দালালের মাধ্যমে চোরাই পথে আসছিল বাংলাদেশে।তার বিশোর্ধ বয়স্হা ভগ্নিকে পাত্রস্হ করার মানসে । তাদের সঙ্গে রয়েছে অনেক স্বর্ণ রৌপ্যের অলংকার ও নগদে প্রচুর ভারতীয় রুপি। বাংলাদেশে ঢোকার পূর্বমুহূর্তে সীমান্ত পুলিশের হাতে তারা ধরা পড়ে যায় ।

লুৎফর রহমানের পূর্বপুরুষ বাংলাদেশের হলেও নাগরিকত্ব সনদ কিংবা নিজের বৈধতা প্রমাণের সঠিক কোনো কাগজপত্র তাদের নেই।এদিকে বয়সোত্তীর্ণ ভগ্নির বিবাহ নিয়ে সে ভারতে পড়েছিল বড়ই বিপাকে। হিন্দুদের ষড়যন্ত্রের কারণে সেখানে ভগ্নির জন্য কোনো যোগ্য পাত্র জোগাড় করতে পারছিল না।যতবার বিবাহের প্রস্তাব আসে ততবারই নানান কুকথায় ভাঙাচি দেয় ঐ সম্প্রদায়ের কিছু লোক। উপায়হীন হয়েই তারা এসেছিল ।

লুৎফর রহমানের ভগ্নির নাম জামিলা বেগম। জামিলা বেগমকে পুত্রবধু হিসেবে গ্রহণ করতে সম্মতি জানিয়ে তাদের আসতে পত্র লিখেছে দূরসম্পর্কের এক আত্মীয়। বাংলাদেশে বিবাহের সব ব্যবস্থা পাকাপাকি করেই তারা এসেছিল। পথিমধ্যে, এই বিভ্রাট।  যখন তারা সীমান্তে ধরা পড়ে তখন এপারে অপেক্ষারত আত্মীয়টি লুৎফর রহমানকে না চিনে, পুলিশী জেরার ভয়ে পাত্রসহ সটকে পড়লো দ্রুত।
লুৎফর রহমান ভীষণ ভয় পেয়েছে । নিজের থেকে বেশী চিন্তিত অবিবাহিতা ভগ্নির নিরাপত্তা ও জামিন নিয়ে। কথায় বলে, পুলিশে ছুলে আঠারো ঘাঁ। আর জেল হাজত হয়ে গেলে তো সাড়ে সর্বনাশ। লুৎফর রহমান ভয়ে ত্রাসে দিশেহারা। বাংলাদেশে সে আর কাউকে চেনেনা তেমন। এমন জটিল কেস। তার প্রয়োজন বিচক্ষণ আইনজীবী। আত্মীয়টি কে অবশ্য ভালোই বলতে হবে।ঘন্টা খানেকের মধ্যে সাহায্য এসে গেল। তাদের উপকার বা উদ্ধারের জন্য তৎক্ষণাৎ থানায় পাঠালো আইজউদ্দীনকে। আত্মীয়টির সাথে আইজউদ্দীনের মুখ চেনা শুধু নয় দহরম মহরমের সম্পর্ক।লুৎফর রহমানকে নিজের পরিচয় দিয়ে তা জানালো আইজউদ্দীন।
যাইহোক, আইজউদ্দীনের পরামর্শ মোতাবেক লুৎফর রহমান দ্রুত শরণাপন্ন হলো মোক্তার সাহেবের।তিনি কেস কোর্টে ওঠার আগে জামিনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেন থানায় ।
আরেক দিকে সরকারী উকিল তাদের বৈধতার চ্যালেঞ্জ দেখিয়ে জামিন না মন্জুর করে নিল। মোক্তার সাহেব আসামী পক্ষের। তিনি এই বিষয়ের অসম্ভব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোক। আইনের বই ঘেঁটে বের করলেন জামিনের সহজ উপায়। যদি দেশের কোনো বৈধ ব্যক্তি উক্ত রমনীর সঙ্গে ঘটনার মাত্র একদিন পূর্বেও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে । এই মর্মে পাকা কাগজ দেখানো যায় তবে বৈবাহিক সূত্রে এদেশে রমনীটির প্রবেশের অবৈধতা থাকেনা। মামলা ডিসমিস। আত্মীয় হিসেবে লুৎফর রহমানেরও থাকার সাময়িক অনুমতি মিলে যাবে কিছু শর্ত সাপেক্ষে। জামিলা বেগমের কথা ভেবে মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তির প্রয়োজন।
মোক্তার সাহেব লুৎফর রহমানের সঙ্গে শলা-পরামর্শ করে পাত্র হিসেবে ঠিক করলেন স্বয়ং আইজউদ্দীনকে। ইতোপূর্বে আইজউদ্দীন নিজেকে অবিবাহিত হিসেবে দাবী করতো। তাছাড়া অর্থ উপার্জন নিয়ে আইজউদ্দীন বেশ কয়েক বছর এতো মত্ত হয়েছিল। অন্য কোনদিকে মন দেবার সময় পায়নি। নিজ দেশে পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ শূন্য ছিল। একজন সঙ্গীনির প্রয়োজন খুব অনুভব করছিল।
জামিলা বেগমের মুখখানা কুমড়োপনা ঢাউস হলেও মোটামুটি সুশ্রী, তেজের ভাবটাই বেশী। নাক-নকশা মোটামোটা, আকারও তদ্রুপ মাঝামাঝি, গায়ে গতরে গোশত আছে। এককথায় স্বাস্থ্যবতী রমনী। কোমর ছাড়ানো একঢাল ভাঙা ভাঙা কৃষ্ণবর্ণ কেশ তার পিঠ ছেয়ে থাকে।গায়ের রং ফর্সা। আইজউদ্দীনের খুব পছন্দ জামিলা কে। তাকে দেখার পরে থেকেই মনে ধরেছে। রাজকন্যার সঙ্গে আছে নগদ অর্থ ও সোনা রুপার অলংকার । সে আনন্দে আটখানা।
দেশের বাড়িতে তার পুত্র, কন্যাসহ আগের স্ত্রী বর্তমান। তাতে কী? স্ত্রীর সম্মতি নিয়ে বিবাহ হবে। নতুবা অসম্মতি দিলে বিবাহের পূর্বেই তাকে তালাক পাঠাবে। তবু জামিলা বেগমকে হাতছাড়া করা যাবে না। ফ্রান্সের লেডি সিম্পসনের জন্য ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড যদি সিংহাসনের মায়া ত্যাগ করতে পারেন আর ঐ গ্রাম্য মেয়েলোক তো সামান্য। অর্থ কড়ি থাকলে গন্ডায় গন্ডায় পাওয়া যায়।
জামিলা বেগমকে সব খুলে বলা হলো। সেও গররাজি নয় বিবাহে। আইজউদ্দীনের যেই ভাবা সেই কাজ। সে কালবিলম্ব করলো না। প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিয়ে সে ভিনদেশে নতুন সংসার সাজিয়ে নিল। এরপর সে তার দেশের বাড়ির সঙ্গে একেবারেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল। যদিও সে তালাকের পূর্বে তার প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের দেশের বাড়িতে থাকার অনুমতি ও নিয়মিত ভরণ-পোষণ, সন্তানের খাই খরচা পাঠানোর অঙ্গীকার করেছে। কিন্তু তার স্ত্রীর অতি ঘৃণা বশতঃ এ মতের ঘোর আপত্তি রয়েছে । পরবর্তীতে একবস্ত্রে সে সন্তানাদি নিয়ে আইজউদ্দীনের গৃহ ত্যাগ করে পিত্রালয়ে গিয়ে ওঠে।
পরপর কয়েকটি বছর নিরাপদে কাটলো। জামিলা বেগমের গর্ভে অনেকগুলো সন্তান সন্ততি হয়। তিনটি ছাড়া বাকি সবাই জীবিত আছে। তন্মধ্যে প্রেমা আইজউদ্দীনের তৃতীয় সন্তান।

চোখের নেশা আর লোভের বশে বিবাহ করে পরে আইজউদ্দীন অনুতাপ অনলে দগ্ধ হয়েছে বেশী। এই ব্যাপারে সে অদ্ভুত পীড়িত ছিল। তারপর থেকে দেশের এলাকার বাসিন্দাদের সাথে পূণরায় যোগাযোগ স্থাপনের তৎপর হয়েছে । বাড়িতে মাসাধিক পরপরই এসে আরষ্ঠভাবে বসে থাকে। কেঁদেকেটে একেবারে বুক ভাসিয়ে দিতো। সকল মানুষই বোধহয় জীবনে এমন কোনো না কোনো মুহূর্তের সম্মুখীন হয়। যাইহোক, এই সময় তার মনে হঠাৎ দেশের মানুষের দুঃখ কষ্টের কথা মনে পড়ে যায়। তাদের উদ্ধারের জন্য হৃদয়টা উথাল পাথাল করে। তখন থেকে আইজউদ্দীনের বাড়িতে সর্বক্ষণ বহিরাগতের সংখ্যার আধিক্য। সে তার দেশগ্রামের কাউকেই বিমুখ করে না। প্রত্যেকের জন্য সহানুভূতি দেখায়। নিজের ভাগ্নে ভাইপোদের আনিয়ে শহরের স্কুল কলেজে ভর্তি করিয়ে দিল। কারোর পড়াশোনার খরচ চালায়। যোগ্যতা অনুযায়ী কারোর জন্য চাকরির চেষ্টায় লাগে । অসুস্থ হয়ে এলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। টাকা কড়ি দেয়। কন্যাদায়গ্রস্হ অভাবী পিতাকে দেয় বিবাহের খরচ, কারুর পকেটে ভরে দেয় যাতায়াতের ভাড়া।
ক্রমে ক্রমে আত্মীয় অনাত্মীয় মিলে সকল শ্রেণীর স্বজনে ভরে উঠলো তার বাড়ি। এমনকি নিজের আত্মার শুদ্ধি ও আত্মিক ঋণ মোচন তার মনে এমন প্রভাব বিস্তার করেছিল যে স্বীয় কন্যাদেরকে দেশের পাত্রের সাথে বিবাহ-শাদী দিয়ে রাখলো। সে যেন বুঝতে পেরেছে, কিংবা এমন ভাব দেখাতো যেন এসবের মাঝেই তার কর্তব্য ও কৃতিত্ব।
চলবে……….

এ জাতীয় আরো সংবাদ