সারা বিশ্বে তোলপাড় চালানো করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে চীনের ওপর চাপ বাড়ছে। এ ভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে তদন্ত চাওয়াদের দলে এবার যোগ দিল অস্ট্রেলিয়া। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী করোনা ভাইরাস নিয়ে চীনের কর্মকাণ্ডের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং এর উৎপত্তির বিষয়ে আন্তর্জাতিক তদন্ত চেয়েছেন।
গেল বছরের শেষের দিকে চীনের উহানের একটি মার্কেট থেকে এ ভাইরাস উৎপত্তি লাভ করে বলে এখনও পর্যন্ত মনে করা হয়। এরপর এটি সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়েছে। এতে আক্রান্ত হয়েছেন ২৩ লাখের বেশি মানুষ, মারা গেছেন ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষ।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেরিজ পেইন বলছেন, চীনের স্বচ্ছতার বিষয়টা তার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এবিসি টেলিভিশনকে তিনি বলেছেন, করোনা ভাইরাস ইস্যুটাকে আলাদা আলাদাভাবে দেখতে হবে। আর আমার মনে হয় সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অস্ট্রেলিয়া সেটার ওপরই বেশি গুরুত্ব দেবে।
এখনও পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া মহামারি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। রোববার দেশটিতে ৫৩ জনের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানানো হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫৮৬ জনে।
অস্ট্রেলিয়াতে এখনও পর্যন্ত ৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন সংক্রমণের হার গেল ৭ দিন ধরে ১ শতাংশের নিচে রয়েছে; যা অন্য অনেক দেশের চেয়ে কম।
পেইন এমন এক সময় এ তদন্তের কথা বললেন যখন বাণিজ্যিকভাবে তার দেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশ চীনের সাথে একটা উত্তেজনা চলছে।
অস্ট্রেলিয়ার অভিযোগ চীন তাদের নিজস্ব বিষয়ে নাক গলাচ্ছে। এছাড়া প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবও ভালো চোখে দেখছে না অস্ট্রেলিয়া। মূলত এসব বিষয় নিয়ে দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক কিছুটা খারাপ হয়েছে।
এদিকে যেমন অস্ট্রেলিয়া করোনা ভাইরাসের তদন্ত চেয়ে আওয়াজ চড়া করল, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও করোনা ভাইরাস নিয়ে চীনকে দায়ী করে আসছেন।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাস প্রথম ছড়িয়ে পড়ার পর চীন তথ্য গোপন করেছে বলে অভিযোগ করে আসছেন ট্রাম্প ও তার মতাদর্শীরা। শনিবার ট্রাম্প বলেছেন, চীন যদি জেনেশুনে সব করে থাকে তবে তাদের এর ফল ভোগ করতে হবে।
তবে এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে চীন। দেশটি বলছে, তারা কোনো তথ্য লুকাচ্ছে না এবং সঠিক সময়েই তারা বিশ্বকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছে।
চীনের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে গত সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় অর্থসাহায্য বন্ধের হুমকি দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে ট্রাম্পের মতো একই ধরনের অভিযোগ এসেছে অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছ থেকেও। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী গ্রেগ হান্ট অভিযোগ করেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোনো কোনো পদক্ষেপ আসলে কোনো কাজেই আসেনি। তিনি বলেন, জেনেভা থেকে যেসব পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে সেটাতে কারও কোনো সাহায্য হয়নি। আমরা ভালো করেছি কারণ আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত নিজে নিয়েছি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দিকে না তাকিয়েই ফেব্রুয়ারির ১ তারিখে চীন থেকে প্রবেশ বন্ধ করে দেয় অস্ট্রেলিয়া। পরে তারা তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দেয় ও দেশে মানুষের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।
হান্ট বলছেন, করোনার সাথে যুদ্ধে তার দেশ জয়ের পথে থাকলেও জয় এখনও আসেনি।
অস্ট্রেলিয়ার প্রতিবেশি নিউজিল্যান্ডও করোনার সঙ্গে যুদ্ধে বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। একজনেরও মৃত্যুর আগেই দেশটি ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিল। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী রোববার সেখানে নতুন করে চারজন আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৮ জনে। সেখানে এখনও পর্যন্ত মারা গেছেন ১১ জন।
সূত্র : জাগো নিউজ