রহমতের মাস রমজান শেষের পথে। ২০ রমজান (বৃহস্পতিবার) থেকে ইতেকাফে নিয়োজিত থাকবে মুমিন মুসলমান। মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে এবারের রমজানের ইবাদত ও আমেজ দেশের মসজিদগুলোতে সেভাবে প্রাণবন্ত না হলেও যার যার মতো করে বাড়ি মসজিদ কিংবা নিরাপদ অবস্থানে থেকেই রোজাদার পালন করছেন রমজানের ইবাদত-বন্দেগি।
মহামারি করোনায় ঘরে কিংবা মসজিদে অবস্থানকারী রোজাদার মুমিন মুসলমানের জন্য রমজানের শেষ ১০ দিনের ইবাদত-বন্দেগির বিশেষ কিছু ইবাদত ও উপায় তুলে ধরা হলো-
– বছরের সেরা ১০ রাতের ইবাদাত
আল্লাহ তাআলা রমজানের শেষ দশকের প্রত্যেকটি কাজ বা ইবাদতকে উদারভাবে দেখবেন এবং অনেক বেশি সাওয়াব দেবেন। তাই প্রত্যেকের উচিত, রমজানের শেষ দশকে সময় অপচয় না করে ইবাদাত-বন্দেগিতে মনোযোগী হওয়া। অলসতা ও একঘেয়েমী রমজানের ইবাদতের প্রধান প্রতিন্ধক। তাই যারা প্রথম দুই দশক অলসতায় কাটিয়ে দিয়েছে, তাদের জন্য শেষ দশকের প্রতিটি রাতের ইবাদত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
– বিশেষ দোয়ার মাধ্যমে ইবাদাত
শেষ দশকের প্রতিটি রাতে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া ও ইসতেগফারে কাটিয়ে দেয়া। বিশেষ করে লাইলাতুল কদরের দোয়া নামে পরিচিত দোয়াটি পড়া। যে দোয়াটি বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে শিখিয়েছেন। আর তাহলো-
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)
– সঠিকভাবে লাইলাতুল কদর তালাশ করা
রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর তালাশ করতে থাকা। কারণ লাইলাতুল কদর হলো হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এ রাতের ইবাদাত হাজার মাসের ইবাদাতের সমান। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরের রাতে বিশ্বাস ও পুরস্কারের আশায় ইবাদাতরত অবস্থায় থাকবে, আল্লাহ তাআলা তার অতিতের সব গোনাহ মাফ করে দেবেন।’ (বুখারি)
– দোয়ার একটি সূচি তৈরি করে নেয়া
শেষ দশকের বিজোড় রাতে আল্লাহর কাছে ন্যায়ের পথে চলা এবং অন্যায় পথ থেকে বিরত থাকতে নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, আত্মীয়-স্বজনের জন্য তথা নির্যাতিত মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করতে একটি তালিকা তৈরি করে সদা মনে জাগ্রত রাখা। বিশেষ করে কুরআনে বর্ণিত ক্ষমা প্রার্থনার দোয়াগুলো সেজদা ও তাশাহহুদে পড়ার চেষ্টা করা।
– রাতের ইবাদতের জন্য দিনে ঘুমানো
রমজানের শেষ দশ দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটুও ঘুমাননি। তিনি সারারাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি করতেন। তাই দিনের বেলায় কিছু সময় ঘুমিয়ে নেয়া। রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে থেকে লাইলাতুল কদর পাওয়ার চেষ্টা করা।
– অযথা সময় ব্যয় না করা
কোনো কারণ বা প্রয়োজণ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ইলেক্ট্রনিক্স মাধ্যমসহ সব ধরনের অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় বয় না করা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থাকরেও তা যেন হয় ইবাদতের উৎস। তাই ইবাদত বন্দেগিতেই বেশি সময় ব্যয় করা। ইবাদতে মনোযোগী হওয়া।
– বেশি বেশি কুরআন তেলওয়াত করা
শেষ দশকে কুরআন তেলাওয়াত ও এর মর্মার্থ অনুধাবনের চেষ্টা করা। কেননা কুরআনের অধ্যয়নেই সাওয়াব ও ফজিত বেশি। তাতে সুযোগ না থাকলে শুধু তেলাওয়াতেও রয়েছে অনেক সাওয়াব ও ফজিলত। তাই বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা।
– ধের্য্য মাধ্যমে ইবাদাত করা
বছরের ১১ মাস ২০ দিন অপেক্ষার পর আসে রমজানের শেষ দশক। এ দশকে মুমিন মুসলমান হাজার বছরের সেরা রাত ‘লাইলাতুল কদর’ তালাশে অপেক্ষমান। তাই ধৈর্যসহ এ রাতের তালাশ করা। এ দশ দিন কোনোভাবেই অধৈর্য হওয়া যাবে না। রমজানের এ শেষ দশকের প্রতিটি রাতই নিজের জীবনের জন্য চূড়ান্ত সময় ভেবে ধৈর্য সহকারে ইবাদাত-বন্দেগিতে মনোযোগী হওয়া। এ কথা মনে করে ইবাদাত করা যে, এ রমজানের শেষ দশকই হয়তো জীবনের শেষ দশক।
– অসহায়দের দান করা
শেষ দশকের রাতে নামাজ, জিকির-আজকার, তেলাওয়াত ও অন্যান্য ইবাদাতের পাশাপাশি যারা ইতেকাফে বসে না তাদের জন্য গরিব-দুঃখীর মাঝে আল্লাহর ওয়াস্তে দান-খয়রাত করা। ইয়াতিম মিসকিনদের সাধ্যানুযায়ী সহায়তা করায় রয়েছে অনেক সাওয়াব। আর তা যদি হয় লাইলাতুর কদরে তবে সে দানের হাজার মাসের শ্রেষ্ঠ দানে পরিণত হবে।
– অন্যকে ইবাদাতে অনুপ্রাণিত করা
রমজানের শেষ দশকে ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী, মা-বাব, ভাই-বোন, পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও বন্ধু বান্ধবদের রাতে ইবাদত বন্দেগিতে নিয়োজিত হওয়ার পরামর্শ দেয়া। তাদের সঙ্গে ইবাদতের প্রতিযোগিতায় নামার প্রস্তুতি গ্রহণ করা। সবাইকে লাইলাতুল কদর প্রাপ্তি অনুপ্রাণিত করে তোলা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে লাইলাতুল কদর প্রাপ্তিতে ইবাদাত-বন্দেগি করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।