1. successrony@gmail.com : Mehedi Hasan Rony :
  2. arif_rashid@live.com : Arif Rashid : Arif Rashid
  3. meherunnesa3285@gmail.com : Meherun Nesa : Meherun Nesa
বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

জাতীয় কবির ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

দিনলিপি নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২০
  • ৬৬৬ বার

‘আমি চিরতরে দূরে চলে যাব, তবু আমারে দেব না ভুলিতে।’ সত্যি চিরতরে দূরে চলে গেলেও জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম তাঁকে ভুলতে দেননি আমাদের। আজ ২৭ আগস্ট। সাম্যের গায়ক, বিপ্লবের উদ্দীপক আর মানবতার বাহক জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৬ সালের এই দিনে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন বাঙলির চেতনার এই কবি।

দীর্ঘ দিনের বাকরুদ্ধতার পর ইহলোক ছেড়ে গেলেও নজরুলের সৃষ্টিশীলতার চেতনা আজও জীবন্ত। বাংলা ও বাঙালি জাতি যতদিন থাকবে, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রাসঙ্গিক হয়ে বেঁচে থাকবেন। দ্রোহের, বিদ্রোহের, মানবতার কবি বিভিন্ন নামে বাংলা সাহিত্যে নজরুলের সৃষ্টিশীলতা দ্যুতি ছড়িয়েছে দিকে দিকে।

যেখানেই অন্যায়-অবিচার, সেখানেই চলেছে তাঁর প্রতিবাদী কলম। মুক্তি আন্দোলনে তাঁর বজ্রকণ্ঠ ও লেখনি ইতিহাসের অংশ। তাঁর চেতনাদীপ্ত কাব্য, সঙ্গীত, নাটকসহ সকল সাহিত্যসৃজন বাঙালির আজন্মের উদ্দীপক শক্তি, প্রেরণার উৎস। বিদ্রোহী দুর্বার লেখনীর অপরাধে তাঁকে দীর্ঘ কারাবাসও করতে হয়েছিল।

তাতেও দমেননি নজরুল। উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, সামাজিক বৈষম্য ছাড়াও স্বদেশপ্রেমের প্রতীক নজরুল পরাধীনতার জিঞ্জির ভেঙ্গে বলেছিলেন, ‘আমি মানি না কোন আইন, আমি ভরা তরি করি ভরা ডুবি, আমি ভীম, ভাসমান মাইন।’ সুরের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তাঁর বিচরণ ঘটেনি।

একাধারে গজল, শ্যামাসংগীত, ঠুমরীর পাশাপাশি লিখেছেন অসংখ্য ইসলামী গানও। আবার সব ছাপিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন প্রেমিক কবিও। নানা চরাই উৎরাই পেরিয়ে এই ক্ষণজন্মা তাঁর কর্মময় জীবনে দিয়ে গেছেন আলোর ঝলক। যেই আলোয় আলোকিত হয় প্রতিটি ঘর। তাঁর ভাষায়- ‘আমি পেতে আসিনি, এসেছিলাম দিতে’।

কবিতা, গান ও প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি মানবিক দর্শনে ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাঙালির মনোরাজ্যকে বিকশিত করার প্রধান স্রষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। নজরুল একদিকে যেমন শ্যামা সঙ্গীত ও কীর্তন লিখেছেন, তেমনি লিখেছেন ইসলামি ভাবধারার গান। তারুণ্যের আবেগ ও বিদ্রোহের চেতনাকে তাঁর মতো করে আর কেউ চিত্রিত করতে পারেননি। বিদ্রোহী কবি হিসেবে-খ্যাত হলেও কবির প্রেমিক রূপটিও প্রবাদপ্রতিম।

কাজী নজরুল ইসলাম অসাম্প্রদায়িক, শোষনমুক্ত দেশ ও সমাজ গড়ার মানসে সাহিত্যে বিভিন্ন শাখায় লেখালেখি করেছেন। এসব ক্ষেত্রে তিনি সংগ্রামী ও পথিকৃৎ লেখক। বাঙালির জাতীয় জীবনে নজরুলের সবচেয়ে বড় অবদান হলো তিনি অসাম্প্রদায়িক বাঙালির চেতনায় প্রোথিত করেন স্বাধীনতার বীজমন্ত্র।

তাঁর লেখনী জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তিনি সকল প্রকার বৈষম্য, অন্যায়, অত্যাচার, নিপীড়ন ও শোষণের বিরুদ্ধে ছিলেন চিরবিদ্রোহী। তিনি মানবতার জয়গান গেয়েছেন তার প্রতিটি রচনায়।

দিবসটি উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজনের মধ্যদিয়ে দিনটি পালন করা হচ্ছে।

বাংলা ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে কবি কাজী নজরুল ইসলাম জন্মেছিলেন। তাঁর ডাক নাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। কাজী ফকির আহমেদ ও জাহেদা খাতুনের ষষ্ঠ সন্তান ছিলেন নজরুল। ১৯০৮ সালে পিতার মৃত্যুর পর মাত্র দশ বছর বয়সেই রোজগারে নামতে হয় দুখু মিয়াকে।

মক্তবের শিক্ষক, মুয়াজ্জিন ও মাজারের খাদেম হিসেবে কাজ করতে হয় তাঁকে। কিছু দিন পর যোগ দেন লেটোর দলে। লেটোর দলের হয়ে গান বাঁধা ও নাটকে অভিনয় করে চলে কিছু দিন। রেলের ইংরেজ গার্ডের খানসামা, রুটির দোকানের কর্মচারী হিসেবেও কাজ করতে হয়েছে তাকে।

‘বিদ্রোহী’, ‘সাম্যবাদী’ ইত্যাদি কবিতার মাধ্যমে তিনি বাংলা সাহিত্যে নতুন ঝড় তোলেন। বিশেষ করে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রকাশের পর বাংলার পাঠকসমাজে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। জরুল পত্রিকা সম্পাদনা ও চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।

এছাড়া, তিনি ধূমকেতু ও লাঙল পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তিনি ব্রিটিশবিরোধী লেখার জন্য কারাবন্দিও ছিলেন। তিনি প্রায় ৩০০০ গান লেখেন। অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশী, দোলন চাঁপা, ছায়ানট, ইত্যাদি তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। বাঁধনহারা, মৃত্যুক্ষুধা, কুহেলিকা তার উপন্যাস। ব্যথার দান, রিক্তের বেদন, শিউলিমালা ইত্যাদি তার বিখ্যাত গল্পগ্রন্থ। তিনি সুগায়ক ছিলেন। ধ্রুব নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে স্বপরিবারে স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবির মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেন। ১৯৭৬ সালে নজরুল ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সমাহিত করা হয়।

এ জাতীয় আরো সংবাদ