1. successrony@gmail.com : Mehedi Hasan Rony :
  2. arif_rashid@live.com : Arif Rashid : Arif Rashid
  3. meherunnesa3285@gmail.com : Meherun Nesa : Meherun Nesa
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩৭ পূর্বাহ্ন

কুবলয়- ছয় পর্বের দ্বিতীয় খণ্ড

সিফাত হালিম, ভিয়েনা।
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ৭৬৩ বার

পূর্বেই উল্লেখ করেছি, আইজউদ্দীন সর্বদা ব্যস্ত মানুষ। বাইরে থেকে আসতে আসতে তার অনেকটা দেরী হয়ে যায়। মাঝখানে লম্বা সময়। তার দুই পুত্র মদন আর জগনের এমন দাপট যে, বড়ো পুত্র মদন তখন এই বাড়ির কর্তা ব্যক্তি । আর জগনের কর্তৃত্ব দমন করার সাধ্যি কারোর নেই।

মদনের গায়ের রং কুচকুচে কালো। তাগড়া জওয়ান ও বেশ লম্বা। তার কলেজের সাপ্তাহিক ছুটি যে কোনদিন হবে, সে খবর কেউ বলতে পারে না । বাসায় বসে সর্বক্ষণ গুলতানি করে আর ফুঁ ফুঁ সিগ্রেট ফোকে। সবার উপর তার হুকুমদারি করা চাই। কুঁড়ের বাদশাহ। বাড়ির ছোটদেরকে দিয়ে জোর করিয়ে কিংবা ভয় দেখিয়ে তার কাপড় ধোঁয়া কাঁচা, জুতা পালিশ থেকে আর সকল কাজ করিয়ে নেয়। এছাড়া এ বাড়িতে আরও আশ্রিতরা থাকে। কেউই বাদ যায় না ।
ঘরের বাইরে রাস্তা সন্নিকটে মুদিখানা। দু’কদম হেঁটে গিয়ে নিজের কিছু কেনাকাটা করে আনতে পারে। বিশেষ করে ধূমপানের মতো জিনিস। তা না, কোমলমতি শিশু ভাগ্নে ভাগ্নিগুলোকে পটিয়ে, উপরি আনি দু’আনির হাতে ধরিয়ে দোকানে পাঠাবে সাজা পান,দাদাভাই ম্যাচ, স্টার বা বক সিগারেট ক্রয় করতে। বখশিশের লোভ। ছোটরা অখুশি না।
আইজউদ্দীন গৃহ ত্যাগের পরপরই ছোটরা হুড়মুড়িয়ে এসে মামাকে ছেকে ধরে। এই বিশেষ কাজের জন্য মামা যে কখন কাকে ডেকে নেয়? আজ কে হবে সেই ভাগ্যবান?
যাইহোক মদন অতি স্বাস্থ্য ও চেহারা সচেতন। সকালে খোলা হাওয়ায় কুয়োর ধারে পাটি পেতে খালি গায়ে হাত-পা ছড়িয়ে অলস বসে থাকে। কুয়োর ধারে বসার কারণ,গাছগাছালি ঘেরা বাড়ি। সকালের প্রথম রোদ সেখানে এসে বাঁধাহীন পড়ে। এবং সারা দুপুর অবধি থাকে। পাশেই হেঁশেল ঘর। উঠে গিয়ে নাস্তা খেতে হয় না। হুকুম মতো সেখানেই সরবরাহ হয়ে যায় গরম গরম রুটি, লুচি ভাজি কিংবা পাঁচফোঁড়ন দিয়ে লাবড়াঘন্ট।
তৃপ্তি সহকারে নাস্তা সেরে এবারে ছোটদেরকে ডেকে বা ধরে আনার পালা।এর কারণ সহজ। অবশ্য তারা সাহস দেখায় না। করলেও কিছু লাভ নেই। তার হাতের চড় চাপ্পড় অনেকেই খেয়েছে। কটমট চক্ষুতেই কাজ দেয় ডাকলেই আসে হুকুম তামিল করতে।

হঠাৎ বিবস্ত্র হয়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে। এই সময় প্রায় দিগম্বর মদন নেংটির উপরে একখানা গামছা পরে ঠিকঠাক হয়ে নেয়। সূর্যের দিকে পিঠ হেলান দিয়ে বসে পার্টিতে। আর ছোটরা ভয়ে ভয়ে তার সারা দেহে ঘানিতে ভাঙা সরিষার খাঁটি তৈল মর্দন করে চলে। সেইসঙ্গে ছোট ছোট চাপড় দেয় । আহ্ কী আরাম।
অমনোযোগী হবার উপায় নেই। সমানে তৈল মালিশের এই পর্বে মদনের মা, চাচি, খালা বাদ যায় না। কেউ না কেউ থাকে সতর্ক পাহারায় , কখনো তারাও মালিশ করে।
মধ্যাহ্ন ভোজের আগ পর্যন্ত অবিরাম ডলাই মাড়াই চলে। সঙ্গে সূর্য স্নান। সূর্যের আলোক রশ্মিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি*। যা কিনা ত্বকের মসৃণতা আনয়ণ করে। জেল্লা বাড়ায়। বিনি পয়সার পাওয়া এমন উপাদান থেকে সে নিজেকে বঞ্চিত করবে কেন? তাছাড়া নিজের চেহারা ছবি সম্পর্কে তার একটা গভীর দূর্বলতা আছে। বাস্তবিক সত্য যে, মানুষ মাত্রেই নিজস্ব চেহারার প্রতি যার যার দূর্বলতা থাকে। সেখানে সুদর্শন কিংবা কুদর্শন বিবেচ্য না।

মালিশ পর্ব শেষ। বাড়ির নিজস্ব পুকুর আছে। মদনের জলাতঙ্ক রোগ। তোলা জল ছাড়া পুকুরের জলে স্নান করবে না। এবার ছোটরা পালাক্রমে কুয়ো থেকে বালতি বালতি জল তুলে তার মাথায় ঢালে। সাবান ঘষে।
তার কাছে শীত গ্রীষ্ম বলে কথা না। সারা বছর ধরে এই প্রক্রিয়া চলেছে। যাইহোক রৌদ্রে পোড়া তৈল মাখা শরীর আর শীতল জলে গোসল সেরে সে চনমনে হয়। তার তখন বেশ ফুরফুরে মেজাজ। দ্বিপ্রহরের আহার শেষে বুকে পাশবালিশ ঠেকিয়ে খানিক গড়ায় শিমুল তুলোর তুলতুলে তক্তপোষে। মদনের ঘুম সহজে ভাঙ্গে না। অনেক ডাকাডাকির পর, চক্ষু রগড়াতে রগড়াতে নাদু শরীর নিয়ে উঠে এসে বসে থাকে বৈঠকখানায়। বিকেলের দিকে নিয়মিত তার কাছে কয়েকজন ইয়ার, বন্ধুবান্ধব আসে, লুকিয়ে গাজা, কখনো দেশি বোতল আনে । সেই সাথে সরবরাহ হবে ঘরের নাস্তাপাতি। সব খরচ খরচা মদনের। দোর জানালা আটকে কিছুক্ষণ ঠাট্টা মস্করা, তাসের আড্ডায় গাঁজার ধুম, মদ গিলা চলে। তারপর বন্ধুরা যে যার পথে। আর সন্ধা হলে তার মন ঘরে টেকেনা। বাইরের দিকে আকর্ষণ। সে সেজেগুজে বসে থাকে। রাত এগারোটা নাগাদ সন্তর্পণে পিছনের খিড়কি খুলে , সিগারেট ধরিয়ে বেরিয়ে যায় কোনো সস্তা বেশ্যার ঘরে। আর আইজউদ্দীন জেগে ওঠার পূর্বে, পান চিবুতে চিবুতে প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে ঢুলতে ঢুলতে খোলা খিড়কির দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকে যায়।

যাইহোক, বেশি বাবুয়ানা করতে চায় না বলে সস্তা খুঁজে। অথচ হাতে টাকার অভাব নেই। তার টাকার যোগান আসে পাড়ার মাস্তান ছেলেদের উপর ধরা ট্যাক্স থেকে। মাথা গুনে সে ট্যাক্স নেয়, অপরাধ কিংবা আয় বুঝে না।
জননী জামিলা বেগমও স্বয়ং অর্থ সরবরাহ করে। উদার হস্তে খরচের টাকা দেয়। জননীর থেকে না পেলেও কুছপরোয়া নেই। পুকুরের মাছ, উদ্যান ভর্তি নারিকেল, সুপারি আম, কাঁঠাল গাছ। জেলে এনে পুকুরে কয়খ্যাপ জাল টানলে অথবা গাছিকে গাছে উঠিয়ে কয়েক কাঁদি পুঁচিয়ে কেটে নীচে ফেললেই পকেট ভর্তি টাকা উঠে আসলো। মুসলিম সকল পরিবারে পুত্ররা সবসময় বেশি প্রশ্রয় পায়।
জামিলা বেগম মদনের ব্যাপারে এতই অবিবেচক, উদার। কথিত আছে, আইজউদ্দীনের মৃত্যুর পর আশ্রয় দেয়ার নাম করে এবং নিজের কিছু স্বার্থজনিত কারণে মদন সুন্দরী এক বেশ্যাকে এনে গৃহসংলগ্ন জমিতে ঘর উঠিয়ে রেখেছিল। রাত বিরাতে সেখানে তার যাতায়াত। চোখের সামনে রক্ষিতার ঘরে পুত্রের ঘুরাফিরা। জামিলা বেগম অবিবেচকের মতো উচ্চবাচ্যহীন। মদনের স্ত্রী ও তাই। লাগাম টেনে থাকে।
ইতোমধ্যেই মদন বিবাহ করেছে। তার স্ত্রী মোটামুটি সুশ্রী চেহারার, সন্তানাদি এসেছে। মদনের স্ত্রী অনেকটাই জামিলা বেগম স্বভাবের। বুদ্ধিমত্তায় আরেক ধাপ উপরে। ফুলে ফুলে উপগত হওয়া মদনের স্বভাব। মদনকে বাইরের আকর্ষণ থেকে ধরে রাখতে এই ব্যবস্থা যথোপযুক্ত। সম্মান রক্ষার উদ্দেশ্যে মদনকে বাড়ির বাইরে রাত্রি যাপন করতে দিতে জামিলা বেগমের মতো তার ও মন ওঠে না।

এই পরিবারের সবচেয়ে ভয়াবহ গোঁয়ার ব্যাক্তিটি হচ্ছে আইজউদ্দীনের দ্বিতীয় পুত্র জগন। সে নিষ্ঠুরতা ও কু কর্মের জন্য বিখ্যাত। মুখ চোখ দেখলেই খানিকটা অভক্তি হয়। নিজেদের পুকুরে একবার বিষ তেল ঢেলে দিয়ে আরেকবার ধানের পালায় আগুন ধরিয়ে দিয়ে পরিবারে সে তার ভয়াবহতার প্রমান ইতোমধ্যে রেখেছে। জগন তার পিতা আইজউদ্দীনের ন্যায় খর্বাকৃতি। গাট্টাগোট্টা, বলশালী দেহের অধিকারী। স্বভাবে মুখচোরা। ভিজে বিড়াল যেন ভাজা মাছটিও উল্টে খেতে পারে না। তার কুকীর্তিকথা এমনই ছড়ালো যে পাড়ার প্রত্যেকের কানে কানে থেকে আইজউদ্দীনের কান পর্যন্ত কিছু কিছু পৌঁছায়।

বড়ো ভাই মদনের মতো পরিবারের মধ্যে তার প্রতাপ নেই। আস্ফালন আস্কারা করবার জো নেই। যখন তখন নারিকেল সুপারি বিক্রি করার উপরে মা, ভাইয়ের নিষেধাজ্ঞা। জননীর মুখের উপর কথা বলে কী উপায়ে? ঘ্যানর ঘ্যানর চেয়ে চিন্তে তার মন ওঠেনা। মা জামিলা বেগম খরচের টাকা দেয় হিসেব করে টিপে টিপে। হাতটানের কারণে সে ফূর্তি ফার্তা লুটতে পারে না। মদনের সব ব্যাপারে জননীর উদার পক্ষপাতিত্ব চলে। নীতিগত আপত্তি করলে কাজ দেয় না।গায়ের জোর খাটে না। মদনের সুখ আহলাদ দেখে তার হিংসা। মনে মনে জ্বলে পুড়ে মরে। জগন মদনকে অপদস্থ করতে তাকে তাকে থাকলো।

মদনের শশুরালয় থেকে আনা ঝি জগনের লক্ষ্যব্স্ত হলো। জগন ঝিকে বিবাহের প্রলোভন দেখিয়ে পটিয়ে পাটিয়ে ভোগ করে রাতের পরে রাত।
ঝি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে ব্যাপারটি জানাজানি হয়ে যায় বাড়ির সকলের কাছে। বড়ো পুত্রবধু, মদনের স্ত্রী দুজনকে হাতে নাতে ধরে দেখালো শাশুড়িকে একদিন।
জামিলা বেগম প্রতিক্রিয়াহীন। অধিক পুত্র স্নেহে অন্ধ জননী । তার স্নেহের তুলনায় দুঃশ্চরিত্র জগনের এহেন কুকর্ম কিছু না। কন্যাদেরকে পায়ে দাবিয়ে টিপে টাপে বেঁধে রাখা যাচ্ছে । কিন্তু পুত্রদেরকে তো আর বেঁধে রাখা যায় না। যাকে বলে পুরুষ ছেলে। পুরুষের কোনো দোষ নাই। যাবতীয় শাস্তি স্ত্রী লোকেরই প্রাপ্য। বেড়া খুলা পেয়ে এদিক ওদিকের বাগানে মুখ দিয়েছে জগন। । ঝি ভুল করেছে পোয়াতি হয়েছে । তাকে শাস্তি পেতেই হবে।
বড়ো পুত্রবধুর সঙ্গে শলাপরামর্শ করে নিল। ঝি এর বাচ্চা নষ্ট করাতে না পেরে প্রথমে পীড়াপীড়ি। পরে দুজনে মিলে মারধর করে ঝিকে বোঝালো, টাকার টোপ ফেললো, আইজউদ্দীনের আশ্রিত নীরিহ এক ভাগ্নের ঘাড়ে দোষটি চাপাতে।

এতবড় ডাহা মিথ্যা। ঝি বেঁকে বসলো।

এই বাড়িতে এমন সব অবস্থা করা আছে, প্রতিবেশীদের সাধ্য কি এর ত্রিসীমানায় পা বাড়ায়। কার বুকের পাটা আছে জগনের কু কর্মের খবর রটাবে ?
তারপরেও ব্যাভিচারের কথাটা তড়িৎবেগে পাড়ার কয়েকজন জেনেও যায় ।
রাখঢাকের ব্যাপার না। তদুপরি জামিলা বেগম শুধু এক ব্যাপারে সাবধান থাকে, যাতে কোনো কথা আইজউদ্দীনের কর্ণগোচর না হয় ।

এরপরে যতদিন যাবে, পেট বেরিয়ে আসবে। মদনের সুচতুর স্ত্রী বিশ্বস্ত এক লোকের হাতে গাছিকখানিক টাকা দিয়ে জোর করে ঝিকে পাঠিয়ে দিল অন্যত্র । সেখানে ঝক্কি ঝামেলা ছাড়াই তার পেট খালাস করানো হয়েছিল। অতঃপর ঝি সেখান থেকে কোথায় যেন পলায়ন করে। সে যাত্রায় রক্ষা পেয়ে যায় জগন। ঘরের মধ্যে এমন কুকাজ। আইজউদ্দীন শুনেছে । কিছু মর্মাহত হয়েছিল কিন্তু জামিলা বেগমের বারংবার অনুরোধে ক্ষমা করে দিল জগনকে। জগন বিবাহযোগ্য ছেলে। তদুপরি নারী আসক্তি রয়েছে । অথচ বেকার এই বাহানায় ওজর আপত্তি তুলে মা ভাই তার দ্রুত বিবাহের চেষ্টাচরিত না করে, তাকে বাড়িতে বসিয়ে খাইয়ে দাইয়ে আল্লাহর ওয়াস্তে আরো মোটা তাজা খাশি বানাতে লাগলো। *দিল্লীকা লাড্ডু*র সাধ জিভে লেগে আছে। জগন স্হির থাকতে পারে না। সে মরীয়া হয়ে থাকে। যদি কোনদিন ঐ তৃষ্ণা খুব জাগে তাহলে বাড়ির বাইরে রাত কাটিয়ে আসে। আর বাকিটা সময়, ঘরে শুয়ে শুয়ে ফূর্তি করার নতুন উপায় বের করলো অপদার্থ । সেই সঙ্গে মরীয়া হয়ে অপদস্থ করতে চাইলো নিজ গর্ভধারীনিকে।

প্রতিবেশীর ভাড়াটিয়া নিম্নবিত্ত এক পরিবার। সেই পরিবারের জ্যেষ্ঠ কন্যার কাছে জামিলা বেগমের কনিষ্ঠ পুত্র মাখনের ছিল অবাধ যাতায়াত। মেয়েটি মাখনের দিল কলিজা। উভয়ে বিবাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কি জন্য যে মেয়েটি জামিলা বেগমের মর্মপীড়ার কারণ, তা অবশ্য জানা যায় না। জামিলা বেগম তাকে পুত্র বধূ স্বীকার করতে একেবারেই নারাজ।
জামিলা বেগমের নির্দেশে সেই পরিবারের গর্দানে খড়গ নেমে আসলো ।
জামিলা বেগম তার বড়ো দুই পুত্রের যোগসাজসে পরিবারটিকে এমন হেনস্থা করে প্রায় , সর্বসমুক্ষে মানসিক নির্যাতন, লাঞ্চনা গঞ্জনা দেয় যে পরিবারটি অতীষ্ঠ হয়ে গেল। একসময় বাধ্য হয়ে তারা অন্য পাড়ায় বাসা ভাড়া করে উঠে যায়। এদিকে মদন ও জগন কর্তৃক অপরিসীম শারীরিক নির্যাতন ও চাপাচাপি চলছে মাখনের উপর। মাখন ভাঙবে তবু মচকাবে না। সে সকল বাঁধা অতিক্রম করে বিবাহ করতে চায় মেয়েটিকে । এইরকম সময়ে অভিভাবকদের পছন্দের পাত্রের সাথে মেয়েটির অন্যত্র বিবাহ হয়ে গেল। কয়েক মাসের মধ্যে সে স্বামী পরিত্যক্ত হয়ে পিতার আশ্রয়ে এসে ওঠে। এবং পূণরায় মাখনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। মাখন একপায়ে খাঁড়া।এরপরেও সে মেয়েটিকে বিবাহ করতে প্রস্তুত ছিল ।

মেয়েটির কিছু খাই খাই স্বভাব দোষ আছে। ইতোমধ্যে সে ঘটায় আরেক ঘটনা। মেয়েটি মাখনের সাথে প্রতারণা করলো। মাখনকে বাদ দিয়ে পাড়ার এক বখাটের সাথে নতুন প্রণয়ে জড়িয়ে পড়ে। কিছুদিনের মধ্যেই সেই যুবকের হাত ধরে অনিদ্দেশে গৃহত্যাগী হয়। তখনই মাখন মনে অনেকটা দাগা খেয়েছে। বাধ্য হয়ে দিলের প্রণয়ীকে কিছুটা ত্যাগ করেছিল। এখানেও মেয়েটার শান্তি হলো না। সেই যুবকের নেশা ভাঙের দোষ। সে ঘরেও মেয়েটি থাকবে না। ছেলেটা কিছুতেই মেয়েটিকে ছাড়ছে না।হাতাহাতি, মারামারি হয়। কিছুদিনের মধ্যে তাদেরকে নিয়ে উভয় পক্ষের মুরুব্বীর পারিবারিক বিচার শালিস বসলো।
জগন মহৎ কাজ করে বেড়ায়। বি, এ পাশ দিয়েছে।পিতার অঢেল সম্পত্তি। জামাই হিসেবে খারাপ কি? অন্ততঃ অশিক্ষিত মাখনের তুলনায় কিঞ্চিৎ উপরে।

মজার বিষয় এবারে মেয়েটির পরিবার থেকে বড়ো ভ্রাতা হিসেবে শালিসের জন্য জগনকে নিযুক্তি দেওয়া হলো। এবং মেয়েটিকে দিয়েই সুকৌশলে ডেকে আনা হলো জাদরেল জগনকে। যে করেই হোক মেয়েটিকে ছাড়াতে হবে। এবং জগনের ঘাড়ে চাপানো চাই। জগনের চেষ্টা ও ভয়ভীতিতে ছাড়ানো হলো মেয়েটিকে। তারপরেও নিয়মিত জামাই আদরে যাতায়াত করে জগন এই বাড়িতে।
বলাই বাহুল্য, বিচারে করতে এসে জগন নিজেই মেয়েটার বশীকরণ যাদুতে বশ হয়ে গেছে । ছোট বড় সম্পর্কে কোনো ভেদ মানলো না দুঃশ্চরিত্র। ফাউ পেয়ে অমনি পটে যায়। আপন কনিষ্ঠ ভ্রাতার কথা মনে জাগে না।
এই খবরে ভীষণ আঘাতে মুষড়ে পড়ছিল মাখন। তার পূর্ব প্রণয়ীর সাথে নিজের আপন বড়ো ভাইয়ের মাখামাখি জড়াজড়ি। মাখনকে এ ভোগান্তি বেশিদিন সহ্য করতে হয়নি। পরে অবশ্য মাখনের অকাল মৃত্যু হয়ে গেল।
জগনের পথ পরিষ্কার। জামিলা বেগমের অনুমতি ব্যতিরেকে সে মহাসমারোহে মেয়েটির সঙ্গে বিবাহ সম্পন্ন করলো। জামিলা বেগম শায়িত অবস্থা থেকে ধড়ফড় জেগে উঠেছে যেন । নিজেকে সামলাতে কষ্ট হচ্ছে ।
জগন দিন দিন দূর্বিনত আর উগ্র হয়ে উঠেছিল । দু তিন বার জেলও খাটছে। জামিলা বেগমকে থোড়ায় কেয়ার করে সে। অবাধ্য পুত্র যদি বাধ্য হয়। এর ফল শুভ হবে। জামিলা বেগম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুধুমাত্র।

চলবে….

এ জাতীয় আরো সংবাদ