1. successrony@gmail.com : Mehedi Hasan Rony :
  2. arif_rashid@live.com : Arif Rashid : Arif Rashid
  3. meherunnesa3285@gmail.com : Meherun Nesa : Meherun Nesa
সোমবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:০২ পূর্বাহ্ন

দেশে প্রথম করোনা টিকা দেওয়া হচ্ছে আজ

দিনলিপি নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০২১
  • ৩৪৪ বার

দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হচ্ছে আজ। দেশের ইতিহাসে প্রথম টিকা নিচ্ছেন একজন নার্স। তিনি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত। একজন নার্সসহ ২৫ জনকে টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে সারা দেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকাল সাড়ে ৩টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। তিনি ভিডিও কনফারেন্সেই প্রথম পাঁচজনের ওপর টিকার প্রয়োগ সরাসরি প্রত্যক্ষ করবেন। উদ্বোধনের পরপরই নিবন্ধনের জন্য অনলাইন ‘সুরক্ষা’ প্লাটফর্ম খুলে দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এদিকে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে প্রথম

চালানে আসা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৫০ লাখ টিকা মানবদেহে প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। অপরদিকে টিকা প্রয়োগের জন্য পাঁচটি হাসপাতাল প্রস্তুত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকাদান কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি দেখতে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের জানান, এ হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন। এর মাধ্যমেই দেশে টিকা দেওয়া শুরু হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী যুক্ত হয়ে প্রথম পাঁচজনকে টিকা দেওয়া দেখবেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের টিকার জন্য নিবন্ধন কার্যক্রমও চালু হয়ে যাবে।

বৃহস্পতিবার ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালের ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে টিকা দেওয়া হবে। সারা দেশে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি। প্রথম যারা টিকা পাবেন, তাদের মধ্যে ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়াও পুলিশ, সেনাবাহিনী, গণমাধ্যম কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ থাকবেন বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

প্রথম যে নার্স টিকা পাচ্ছেন : রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের বিশ্বস্ত কয়েকটি সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের টিকা প্রথম নেবেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু বেরোনিকা কস্তা। রুনুর পর আরও দুই নার্সকে টিকা দেওয়া হবে। একই সঙ্গে এদিন টিকা নেবেন তিন চিকিৎসক। তালিকা অনুযায়ী প্রথমে টিকা নিচ্ছেন ডায়ালাইসিস ইউনিটের ইনচার্জ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু বেরোনিকা কস্তা। এর পরে ফিমেল মেডিসিন ইউনিটের ইনচার্জ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স মুন্নি খাতুন এবং একই ইউনিটে কর্মরত আরেক নার্স টিকা পাবেন। তবে শেষ মুহূর্তে কারও কোনো শারীরিক অসুবিধা দেখা দিলে তালিকায় রদবদল হতে পারে। এই হাসপাতালে চিকিৎসকদের মধ্যে টিকা নেওয়ার তালিকার প্রথমে আছেন কনসালট্যান্ট লুৎফর কবির মবিন, শাহরিয়ার আলম। আরেক চিকিৎসকের নাম এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

টিকা নেওয়ার বিষয়ে রুনু বেরোনিকা গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, হাসপাতাল পরিচালক তাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তবে প্রথম টিকা গ্রহীতা হিসেবে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে অনুভূতি জানাতে রাজি হননি।

ওষুধ প্রশাসনের অনুমতি : এরমধ্যে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে প্রথম চালানে আসা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৫০ লাখ টিকা মানবদেহে প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের এ কথা জানান। মহাখালীতে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, টিকার প্রতিটি লটের নমুনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। বুধবার এ টিকা দিয়েই শুরু হবে করোনাভাইরাসের টিকাদান।

মহাপরিচালক বলেন, এ টিকা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি। যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ সংস্থা এ টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে এবং সে দেশে এটি প্রয়োগ করা হচ্ছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মানদ- অনুযায়ী বিশ্বমানের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। গত ১৬ জানুয়ারি থেকে ভারতে এ টিকা প্রয়োগ করছে। ভারতের সেইসব কাগজও পরীক্ষা করা হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারির এক বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর আশা হয়ে এসেছে টিকা। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড সেরাম ইনস্টিটিউটেও তৈরি হচ্ছে।

এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিশেষ ফ্লাইট টিকার ওই চালান নিয়ে গত সোমবার ঢাকা পৌঁছায়। পরে তা নিয়ে যাওয়া হয় টঙ্গীতে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ওয়্যারহাউসে। সেখান থেকে প্রতিটি লটের নমুনা পরীক্ষার জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছিল। বাংলাদেশে সেরাম ইনস্টিটিউটের ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’ হিসেবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস সরকারকে এ টিকা সরবরাহ করছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমতি পাওয়ায় বেক্সিমকো এখন সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলায় জেলায় টিকা পৌঁছে দেবে। এ টিকার ৩ কোটি ডোজ কিনতে গত ৫ নভেম্বর সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি মাসে টিকার ৫০ লাখ ডোজ পাঠানোর কথা সেরাম ইনস্টিটিউটের। এর আগে ভারত সরকারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে একই টিকার ২০ লাখ ডোজ পাওয়ার পর সরকার ২৭ জানুয়ারি থেকে টিকা প্রয়োগ শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়।

পাঁচ হাসপাতাল এখন প্রস্তুত : আগামীকাল বৃহস্পতিবার ২৮ জানুয়ারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সঙ্গে আরও চারটি হাসপাতালে করোনার টিকা প্রয়োগ শুরু হবে। এগুলো হচ্ছে- ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী জেনারেল হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল।

এই পাঁচ হাসপাতালের পরিচালকরা বলেছেন, তারা করোনা টিকাদান কর্মসূচি চালু করতে প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং তারা প্রস্তুত। তারা বলছেন, প্রথম দিন যদি সবকিছু ঠিকভাবে করা যায়, তাহলে মানুষের আস্থা আসবে, ধীরে ধীরে টিকা নিতে মানুষ উদ্বুদ্ধ হবে।

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান বলেছেন, যাদের টিকা দেওয়া হবে তাদের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী পর্যবেক্ষণ করা হবে। তাদের মধ্যে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কি না সেটা দেখা হবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেছেন, টিকা নেওয়ার প্রস্তুতি ভালোই। টিকা নেওয়ার জন্য কতজন স্বাস্থ্যকর্মী প্রস্তুত করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনেক চিকিৎসক আগ্রহী প্রথম দিনেই টিকা নিতে। আমি নিজে হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে প্রথম টিকা নিতে আগ্রহী আমার কলিগদের টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করতে, উৎসাহ দেওয়ার জন্য, আস্থা জোগাতে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিচতলায় টিকা নেওয়ার জন্য বুথ চালু করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এখানে টিকা দেওয়ার পর পর্যবেক্ষণ করা হবে। সেজন্য ‘পোস্ট টিকা এরিয়া’ প্রস্তুত করা হয়েছে, সেখানে পর্যবেক্ষণ করা হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জুলফিকার আমিন সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের প্রিপারেশন অলমোস্ট আমরা শেষ করে ফেলেছি। তিনি জানান, সাধারণ মানুষের জন্য জাতীয়ভাবে টিকাদান কর্মসূচি চালু হবে তখন এ হাসপাতালে মোট আটটি বুথ থাকবে এবং প্রতিটি বুথে টিকা দেওয়ার জন্য দুইজন নার্স এবং চারজন করে স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন।

টিকা দেওয়ার পর পোস্ট ওয়েটিং রুমে টিকা গ্রহীতাদের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে তারা ৩০ মিনিট পর্যবেক্ষণে থাকবেন। আর এ সময় তাদের পর্যবেক্ষণের জন্য থাকবে একটি মেডিকেল টিম এবং স্ট্যান্ডবাই আরেকটি মেডিকেল টিম থাকবে যেখানে একজন ইন্টারনাল মেডিসিন স্পেশালিস্ট, দুইজন রেসিডেন্স এবং একজন আইসিইউ স্পেশালিস্ট থাকবেন।

মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. অসীম কুমার নাথ সাংবাদিকদের বলেন, হাসপাতালের ভেতরে ভ্যাকসিনেশন সাইটে টিকা গ্রহীতাদের কিছু ভাইটাল বিষয়- যেমন রক্তচাপ, ফুসফুসের অবস্থা এবং অ্যালার্জির কোনো সমস্যা রয়েছে কি না- এসব কিছু যদি ঠিক থাকে তাহলে তাকে টিকা দেওয়া হবে, সেখানে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে ৩০ মিনিট। আর তাদের দেখার জন্য থাকবে একটি মেডিকেল টিম। যদি কোনো সমস্যা না হয় তাহলে তারা বাসায় চলে যাবে এবং তখন তাদের একটি টেলিমেডিসিনের জন্য ফোন নম্বর দেওয়া হবে। যদি বাড়ি যাওয়ার পর কোনো সমস্যা হয় তখন ওই নম্বরে তিনি কল করে প্রয়োজনীয় সেবা নেবেন। টিকা রাখার জন্য হাসপাতালে আইএলআর (হিমায়িত বাক্সের মধ্যে টিকা সংরক্ষণের ব্যবস্থা) ফ্রিজ রয়েছে যেখানে ৩ হাজার টিকা রাখার ব্যবস্থা আছে।

কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের পরিচালক ডা. একেএম সরয়ার উল আলম জানিয়েছেন, এ হাসপাতালের এ সংক্রান্ত প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমেদ সংবাদ মাধ্যমকে জানান, তার হাসপাতালে প্রস্তুতি শেষ। তিনি বলেন, আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। কেবল ২৭ কিংবা ২৮ তারিখকে ধরে পরিকল্পনা নয়, এ পরিকল্পনা অনেক লম্বা, হয়তো এ টিকাদান কর্মসূচি চালাতে হবে অনেক দিন- সে হিসেব ধরেই পরিকল্পনা। তিনি আরও জানান, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ম্যানেজমেন্ট টিম প্রস্তুত করা হয়েছে। গ্রহণকারীদের পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য ২০টি শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে। সঙ্গে রাখা হয়েছে চার বেডের আইসিইউ ইউনিট।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমেদ বলেন, আশাকরি খুব একটা সমস্যা হবে না। তবে একটু মোটিভেশন লাগবে সব লেভেলেই। তিনি বলেন, অথচ এটা পার্ট অব হিস্ট্রি হওয়ার কথা। তাই আমাদের ইচ্ছা যারা সিনিয়র আছেন তাদের দিয়ে এ হাসপাতালে এ কর্মসূচি চালু করার, যাতে করে অন্যদের ভয় বা আতঙ্ক কেটে যায়।

আরও ১৪ জনের মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ৫১৫ : দেশে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে ১২ পুরুষ ও দুই নারী। সবাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮ হাজার ৫৫ জনে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নতুন শনাক্ত হয়েছেন ৫১৫ জন। এ পর্যন্ত মোট করোনাভাইরাসে শনাক্ত ৫ লাখ ৩২ হাজার ৯১৬ জন। গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৬৯৬, অ্যান্টিজেন টেস্টসহ নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৪ হাজার ৪০১।

 

এ জাতীয় আরো সংবাদ