নেত্রকোনায় গৃহহীনদের জন্য নির্মিত ঘরে হস্তান্তরের আগেই ফাটল দেখা দিয়েছে। অসাধু কর্মকর্তাদের অনিয়মের কারণে ঘরে উঠার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে আশ্রয়ন প্রকল্পের এসব ঘর। এতে উপকারভোগিদের মাঝে ছড়িয়েছে পড়ছে আতঙ্ক।
স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসীরা যায়, নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার ধলা গ্রামে গৃহহীনদের জন্য নির্মিত ঘরে ফাটল দেখা দেয়। বিষয়টি জানাজানির পর তড়িগড়ি করে ফাটল বন্ধের চেষ্টা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। পূর্বধলার বিশকাকুনী ইউনিয়নের খলা গ্রামে নির্মিত বারোটি ঘর রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে। এ অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিচার চাইলেন স্থানীয়রা।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, প্রথম দফায় ঘর ও জমি পাচ্ছেন মোট ৯শ’ ৬০ জন ভূমিহীন ও গৃহহীন হতদরিদ্র মানুষ। প্রত্যেকের নামে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে দুই শতক করে খাসজমি। আর তাতে ঘর নির্মাণ বাবদ ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ৭১ হাজার করে টাকা। যার পুরোটাই বহন করা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। নির্মিত ১৯ দশমিক ৬ ফুট বাই ২২ ফুটের দুটি শয়নকক্ষ, একটি রান্নাঘর, সংযুক্ত পায়খানা-গোসলখানা ও সামনে বারান্দাসহ রঙিন টিনের ছাউনি দ্বারা এসব ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ১৬ কোটি ৪১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। জেলার ১০ উপজেলার মধ্যে জেলা সদরে ৪৩টি, বারহাট্টায় ৪৫টি, আটপাড়ায় ৯৮টি, পূর্বধলায় ৫৩টি, দুর্গাপুরে ৩৫টি, কেন্দুয়ায় ৫০টি, কলমাকান্দায় ১০১টি, মদনে ৫৬টি, মোহনগঞ্জে ৩৬টি এবং হাওর উপজেলা খালিয়াজুরিতে ৪৪৩টি গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে।
উপকারভোগি বিউটি আক্তার, রবিকুল মিয়া, দুদু মিয়া ও সুমন মিয়া বলেন, ‘আগে তারা কইছে ঘরো উঠতাম, অহন ঘরে ফাডা দেইখ্যা কয় উঠতাম না। বাইষা মাস গেলে আইতাম। আমার তিনডা বাচ্ছা (ছেলে-মেয়ে) এরারে লইয়া এই ঘরে থাকতাম না। দেওয়াল ভাইঙ্গিয়া মইরা যাইবাম।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য খলিলুর রহমান বলেন, ‘ ঘরগুলো নির্মাণের আগে মাটি কাটা হয়। কিন্তু মাটিগুলো সমান করা হয়নি। মাটিতে ফাঁক থাকায় এখন ঘরের ওয়াল, ফ্লোর ফেটে যাচ্ছে। এগুলো খুব বিপদজনক হয়ে গেছে। বৃষ্টি শুরু হলে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।’
নতুন মাটি ধেবে ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে জানায় প্রকল্পের কাজে জড়িত কর্মকর্তারা। আগামী বর্ষায় পরিস্থিতি দেখে তারপর ঘরে ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হবে বলে জানান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা।
পূর্বধলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘শুনেছি দলিলের সময় ১২শ’ করে টাকা নেয়া হয়েছে। আমি উর্ধ্বতনদের সাথে কথা বলেছি, তারা বলেছেন বরাদ্দ পেলে তাদের টাকা ফিরিয়ে দেব। মাটি কাটার পর তাড়াতাড়ি ঘরগুলো নির্মাণ করার কারণে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সঠিক নিয়মে ঘরগুলো নির্মাণ কাজ করা হয়েছে।
পূর্বধলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে কুলসুম বলেন, ‘অনিয়মের কথা অস্বীকার করে ঘর সঠিক নিয়মে করা হয়েছে দাবি করে মাটি ধেবে ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। আমি গত বৃহস্পতিবার (৪ ফ্রেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায়ও গিয়েছি। মাটির সমস্যার জন্য এমন হয়েছে। কাজ এখনো চলমান রয়েছে। ফাটা স্থানগুলো ঠিক করা হচ্ছে। ঘরের কাজ শেষ হলে উপকারভোগিদের মাঝে হস্তান্তর করা হবে।’
সুত্রঃ জাগো নিউজ।