ভালোবাসার জন্য কি বিশেষ কোনো দিনের দরকার! তারপরও বছরের একটি দিন হয়ে গেছে ভালোবাসার প্রতীকী দিবস। বিশ্বজুড়ে সাড়ম্বরে তা পালিতও হচ্ছে। প্রিয়ার মাঝে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার সেই দিনটিই আজ। ‘আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’। ‘হ্যাপি ভ্যালেন্টাইনস ডে’। ভালোবাসা দিবস নিয়ে বিতর্ক আছে। তারপরও ভালবাসার নামে সুন্দর একটা কিছু হলে মন্দ কি! যদিও ভালোবাসা দিবস প্রবর্তনের শুরু থেকেই বিশ্বব্যাপী দিনটি নিয়ে তরুণ প্রজন্মেরই মাতামাতিটা বেশি। ভালোবাসাকে বহুমাত্রিকতার দৃষ্টিকোণে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবার জন্য হতেই পারে । বুধবার ধরণীতে শুরু হয়েছে বসন্তের উতল হাওয়া। সে হাওয়া আজ ভালবাসার তরঙ্গ হয়ে আছড়ে পড়বে সারা বাংলায়। চিরন্তন ভালবাসার সৌন্দর্য’র আবির ছড়িয়ে পড়ুক তরঙ্গে তরঙ্গে। তবে আমরা যে দিনটিকে ভালোবাসার প্রতীকী হিসেবে উদযাপন করছি এর মূলে হচ্ছে ‘ভ্যালেন্টাইন’। এ নিয়ে প্রচলিত গল্পটি হচ্ছে- সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে একজন রোমান ক্যাথলিক ধর্মযাজকের ২৬৯ খ্রিস্টাব্দের একটি ঘটনা নিয়ে। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের এই ধর্মযাজক একই সঙ্গে চিকিৎসক ছিলেন। তখন রোমান সম্রাট ছিলেন দ্বিতীয় ক্লডিয়াস। বিশ্বজয়ী রোমানরা একের পর এক রাষ্ট্র জয় করে চলেছে। যুদ্ধের জন্য রাষ্ট্রে বিশাল সৈন্যবাহিনী গড়ে তোলা দরকার। কিন্তু লোকজন বিশেষ করে তরুণরা এতে উৎসাহী নয়। সম্রাটের ধারণা হল- পুরুষরা বিয়ে করতে না পারলে যুদ্ধে যেতে রাজি হবে। তিনি যুবকদের জন্য বিয়ে নিষিদ্ধ করলেন। কিন্তু প্রেমপিয়াসী তারুণ্যকে কি নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ করা যায়! এগিয়ে এলেন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। ভ্যালেন্টাইন প্রেমাসক্ত যুবক-যুবতীদের বিয়ের ব্যবস্থা করলেন। চার্চের মোমবাতির নিয়ন আলোয় হচ্ছে তাদের স্বপ্নিল বাসর। ধরা পড়লেন একদিন ভ্যালেন্টাইন। তাকে জেলে ঢোকানো হলো। দেশময় এ খবর ছড়িয়ে পড়লে যুবকশ্রেণির মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিল। অনেকেই ভ্যালেন্টাইনকে জেলখানায় দেখতে যান। ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে আসেন। কারাগারের জেলারের এক অন্ধ যুবতী মেয়েও ভ্যালেন্টাইনের সঙ্গে সাক্ষাতে যেতেন। চিকিৎসক ভ্যালেন্টাইন মেয়েটির অন্ধত্ব দূর করলেন। তাদের মধ্যেও সৃষ্টি হল হৃদয়ের বন্ধন। ধর্মযাজক নিয়ম ভেঙে প্রেম করেন। তারপর আইন ভেঙে তিনিও বিয়ে করেন। যুবক-যুবতীদের সহানুভূতি আর ভ্যালেন্টাইনের নিজেরও প্রেম-বিয়ের এ খবর যায় সম্রাটের কানে। তিনি ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড দিলেন। সেটি ছিল ২৬৯ খ্রিস্টাব্দের আজকের এ ১৪ ফেব্রুয়ারি। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে নবোঢ়াকে উদ্দেশ করে তিনি চিঠি লিখলেন। যার হৃদয়ের কথা শেষ হয়েছিল এভাবে- ‘লাভ ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন’। অতপর এ ভালোবাসার স্বীকৃতি আদায়ে পরবর্তী দুই শতাব্দী নীরবে-নিভৃতে পালন করতে হয়েছে ১৪ ফেব্রুয়ারি। ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে রোমের রাজা পপ জেলুসিয়াস এ দিনটিকে ‘ভ্যালেন্টাইন দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেন। আজ ভালবাসার শক্তিতে সুন্দর সমাজ প্রেমময় পৃথিবী গড়ার শপথ নেওয়ার দিন। আজ ভালবাসার সেই বিশেষ দিবস ভ্যালেনটাইনস ডে। আজ ভালবাসার নেশায় নতুন করে বুদ হবে আজ বাঙালী। সারা পৃথিবীর মতো বাংলাদেশেও উদযাপিত হবে ভ্যালেনটাইনস ডে। প্রেমিক-প্রেমিকারা একে অন্যকে বিভিন্ন উপহার দেবেন। মোবাইল ফোন, এসএমএস, ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে চলবে ভালবাসার আদান প্রদান। বসন্তের প্রথম দিন উদযাপনের রেশ থাকতে থাকতেই চলে এসেছে ভালবাসার দিন। বাসন্তী রং পাল্টে লাল রঙের শহর হবে। প্রেমিকের হাত হয়ে প্রেমিকার সুবিন্নস্ত খোঁপায় উঠবে লাল গোলাপ। আসলেই তো- মনের মানুষটি ছাড়া সত্যি বাঁচা দায়। ভালবাসাহীন জীবন বিবর্ণ।