শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ দাবিতে অনেক বছর ধরেই আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছেন শিক্ষকরা। সরকার নিজে উদ্যোগী হয়ে বিভিন্ন সময় ধাপে ধাপে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণের আওতায় এনেছে। আবারও জাতীয়করণের ভাবনায় এসেছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতেই আনন্দ প্রকাশ করছেন শিক্ষকরা।
সম্প্রতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের বিষয়টি সামনে এনেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের সময় এসেছে। যেখানে-সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না করে সেগুলোকে সরকারের আওতায় আনা প্রয়োজন আছে বলেও মত দিয়েছেন তিনি। শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীও বলেছেন, সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের পরিকল্পনা করেছে।
সরকারের দুই মন্ত্রী-উপমন্ত্রীর বক্তব্যের পরই শিক্ষকরা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সরকারিকরণ নিয়ে কিছুটা আশ্বস্ত হচ্ছেন। এ বিষয়টি সামনে রেখে কথা হয়েছে বেশ কয়েকজন শিক্ষকের জন্য। সরকারে এমন পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছেন তারা।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেতন নিয়ে অনিশ্চয়তা, কম বেতন, পরিচালনা পরিষদের মাতবরি, সাধ্যের অতিরিক্ত পরিশ্রম নিয়েও সাধারণ শিক্ষকরা অনেক অভিযোগ করেছেন। তাদের বিশ্বাস যেসব প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ হবে সেখানেই শিক্ষার পরিবেশ সুন্দর হবে। শিক্ষক নেতারাও বলছেন, জাতীয়করণ এখন সময়ের দাবি।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বাশিস) কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াঁজো ফোরামের মুখপাত্র মো. নজরুল ইসলাম রনি বলেন, ‘দেশে এখন প্রচুর উন্নয়ন হচ্ছে। এটি ভালো। কিন্তু একই সঙ্গে শিক্ষকদের বেতনবৈষম্য ও প্রতিষ্ঠানভিত্তিক বিভিন্ন শিক্ষার মানে আকাশ ছোঁয়া তফাৎ তৈরি হয়েছে। এভাবে চলতে চলতে শিক্ষার পরিবেশ বিশৃঙ্খল হয়ে পড়বে।’
তিনি বলেন, ‘অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের ভেতরে বিশ্বমানের শিক্ষা বাস্তবায়ন করতে হলে গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকেই জাতীয়করণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আন্তরিকভাবে চান তাহলে এটি সম্ভব হবে। আমার বিশ্বাস তিনি সেটি করবেন।’
আরেক শিক্ষক নেতা মোহাম্মদ আতিকুর রহমান তালুকদার বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ হলে শিক্ষার পরিবেশে বিশৃঙ্খলা কমবে। একমুখি শিক্ষা কার্যকর করতেও সহজ হবে। এ ছাড়া বেতনভাতা ও শিক্ষার মান নিয়ে যে বৈষম্য আছে তা দূর হবে।’ এই দুইজন শিক্ষক নেতাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ নিয়ে সরকারের ভাবনা ও দুইমন্ত্রীর বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন।
এদিকে এ সরকারের আমলে এরইমধ্যে ১৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩৩০টি কলেজ ও ৩২০টি হাইস্কুল জাতীয়করণের আওতায় এসেছে। এ ছাড়াও সাড়ে চার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। নতুন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে এ সপ্তাহেই প্রকাশ করা হয়েছে গণবিজ্ঞপ্তি।
এ বিষয়ে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নওফেল বলেন, ‘আমরা এ মাসেই নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির কাজ শুরু করেছি। শিক্ষকদেরেকে আমি আশ্বস্থ করতে চাই, সব নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওর আওতায় আনা হবে। শিক্ষার জাতীয়করণ এখন কেবল শিক্ষকদের জন্য নয়, এটি জাতিরও প্রয়োজন। সেভাবেই সরকার কাজ করছে।’
তবে আগেই জাতীয়করণের আওতায় আসা ৩৩০টি কলেজ এখনও ঝুলে থাকায় শিক্ষকেরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
২০১৬ সালের ১৭ মে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের কাজ শুরু হয়। প্রথমে ৩০৩টি কলেজ নির্বাচন করা হলেও পরে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৩০। এরপর পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও মাত্র একটি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা আত্তীকৃত হয়ে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন। অবশিষ্ট কলেজগুলোর কাজ এখনও ঘুরছে মন্ত্রণালয়ে।
এই বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘স্কুল-কলেজ সরকারিকরণের প্রক্রিয়া অনেক দীর্ঘ।’
তিনি বলেন, ‘এই প্রক্রিয়াটি খুবই জটিল। অনেক শিক্ষকের নিয়োগের সঠিক কাগজপত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকে আবার অনিয়ম করার চেষ্টা করছেন। তারপরও আমরা যতটা দ্রুত সম্ভব কাজটি শেষ করার চেষ্টা করছি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষকদের চিন্তিত হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার এখন শিক্ষাকে আন্তর্জাতিকমানে নিয়ে যেতে সব ধরনের চেষ্টা করছে। কেবল এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোই নয়, এ সরকার পর্যায়ক্রমে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণের আওতায় আনবে।’
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক মিলিয়ে দেড়লাখের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিকের সংখ্যা অনেক বেশি হলেও মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হাজারেরও কম।