1. successrony@gmail.com : Mehedi Hasan Rony :
  2. arif_rashid@live.com : Arif Rashid : Arif Rashid
  3. meherunnesa3285@gmail.com : Meherun Nesa : Meherun Nesa
বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম:

‘দুই সিটির গাড়ি চালায় বাইরের লোক’

দিনলিপি নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২১
  • ১৮৩ বার

সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ির চাপায় সম্প্রতি দুই জন নিহতের ঘটনার পর চাঞ্চল্যকর তথ্য আসছে। দুর্ঘটনায় জড়িত চালকদের কেউই পেশাদার বা করপোরেশন নির্ধারিত চালক নয়। যাদের নামে গাড়ি বরাদ্দ সেসব চালকের কেউ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের গাড়ি চালান না, গাড়ি চালায় বাইরের লোক। মূলত তেল চুরি করে টাকা আত্মসাৎ করাই তাদের ‘বেতন’। করপোরেশনের ২-১ জনের যোগসাজশে ময়লাবাহী গাড়ি চালাতেন তারা, আর তাদের আয় বলতে ছিলো তেলচুরির টাকা।

শনিবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে র‍্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান।

তিনি বলেন, জড়িত চালকদের গ্রেফতারের পর জানা যায়, পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং কথিত ওয়ার্কশপের সহকারী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট অনেকের সাথেই তাদের ঘনিষ্ঠতা হয়। এ সুবাদে সিটি করপোরেশনের চালকদের সাথে তাদের সখ্য হয়। সখ্যের কারণে তারা ময়লাবাহী গাড়ি চালানোর সুযোগ পায়। এজন্য তাদের কোনো বেতন ছিলো না, প্রতিদিন গাড়ির জন্য বরাদ্দকৃত তেল থেকে ১৭-২০ লিটার তেল বিক্রি করাই ছিলো তাদের উপার্জন।গত বুধবার (২৪ নভেম্বর) রাজধানীর গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লাবাহী গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান নিহত হন। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে চালক রাসেলকে গ্রেফতার করে পুলিশ, যিনি ছিলেন প্রকৃতপক্ষে পরিচ্ছন্নতাকর্মী। পরে শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ওই গাড়ির প্রকৃত চালক হারুনকে গ্রেফতার করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-৩)।

শিক্ষার্থী নাঈমের মৃত্যুর পরদিন একই রকমের আরো একটি ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর পান্থপথে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ময়লাবাহী গাড়ির চাপায় সংবাদকর্মী আহসান কবীর খান (৪৬) নিহত হন। এ ঘটনায় শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) চাঁদপুরে অভিযান চালিয়ে চালক হানিফ ওরফে ফটিককে গ্রেফতার করে র‍্যাব-২।

র‍্যাব জানায়, ঘটনার দিন হানিফ পান্থপথ থেকে গাবতলীতে দুইবার ময়লা নিয়ে ডাম্পিং করে। তৃতীয়বার যাওয়ার সময় একটি মোটরসাইকেলকে চাপা দিলে আরোহী আহসান কবীর নিহত হন। ঘটনার পর ভয় পেয়ে হানিফ ও তার সহকারী কামরুল (১০) পালিয়ে যায়। এরপর সেখান থেকে কুমিল্লা হয়ে চাঁদপুরে নানার বাড়িতে আত্মগোপনে যায় হানিফ।চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় র‍্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-২ হানিফকে ধরতে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। এরপর চাঁদপুর থেকে হানিফকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

গ্রেফতার হানিফকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র‍্যাব জানায়, তিনি গত ৬-৭ বছর ধরে সিটি করপোরেশনের ওয়ার্কশপে সহকারী হিসেবে কাজ করছেন। তিনি ডিএনসিসির বেতনভুক্ত বা দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারীও না। প্রতিদিন মেকারের সহকারী হিসেবে কাজ করলে কেউ যা বকশিশ দিতো, সেটাই তার একমাত্র আয় ছিলো।

এরমধ্যে তিন বছর ধরে তিনি ডিএনসিসির বিভিন্ন গাড়ি চালাচ্ছিলেন। ২০১৯ সালে নিজে হালকা যানবাহন পরিচালনার লাইসেন্স পেলেও ময়লাবাহী ট্রাকের মতো ভারী যান চালানোর লাইসেন্স ছিলো না। এরপরও প্রায় দেড় বছর ধরে তিনি এই ময়লাবাহী ভারী ট্রাক চালাতেন।গত কয়েক বছরে সিটি করপোরেশনের কয়েকজনের সাথে তার সখ্য হয়। সেই সখ্য থেকেই গাড়ি চালানোর সুযোগ পেয়ে যান তিনি। এজন্য তিনি কোনো মাসিক বা দৈনিক হাজিরার বেতন পেতেন না। তবে গাড়ির জন্য বরাদ্দকৃত তেল থেকে প্রতিদিন ১৭-২০ লিটার তেল বাঁচাতে সক্ষম হতেন। সেই তেল বিক্রির অর্থই ছিলো তার আয়ের উৎস।

র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, হানিফ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমাদের কাছে ২-১ জনের কথা বলেছে, যাদের সাথে সখ্যের জেরে তিনি গাড়িটি চালানোর সুযোগ পায়। এরমধ্যে ডিএনসিসির স্থায়ী কর্মী এবং মাস্টাররোলের কর্মীও রয়েছে। আমরা বিষয়গুলো যাচাই করতে ডিএনসিসির সাথে আলোচনা করবো। তারা নিশ্চয়ই জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।

এছাড়া, এ ঘটনায় রাজধানীর কলাবাগান থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় গ্রেফতার হানিফকে থানায় সোপর্দ করা হবে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও নিশ্চয়ই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবেন।

নটর ডেম শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় ডিএসসিসির ময়লাবাহী গাড়িচালক গ্রেফতার হারুনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, দেড় বছর ধরে হারুন গাড়িটি চালালেও তার নামেও গাড়িটি বরাদ্দ নয়। তিনিও মূল চালক নয়, তার কাছে আমরা লাইসেন্স পাইনি। ঘটনার দিন হারুন অসুস্থ ছিলো দাবি করেছে, তাই রাসেলকে সেদিন চালাতে দিয়েছিল বলে জানিয়েছে।

কিন্তু সেদিন ছাড়াও রাসেলকে মাঝে মধ্যে গাড়ি চালাতে দিতেন হারুন। রাসেল যখন অ্যাক্সিডেন্ট করে তখন অন্যদের মাধ্যমে খবর পায়। পরে ভয় পেয়ে তিনি পালিয়ে যান। তিনিও গাড়ি চালানোর জন্য ডিএসসিসির কাছ থেকে কোনো বেতন পেতেন না। বেচে যাওয়া তেল বিক্রিই তার একমাত্র আয় ছিলো।

এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতারকৃতরা জানে না গাড়িগুলো কার নামে বরাদ্দ। তবে হানিফের কাছ থেকে আমরা ২-১ জনের নাম পেয়েছি। বিষয়টি আমরা কর্তৃপক্ষকে জানাবো। তারা হয়তো এ বিষয়ে বলতে পারবে। প্রতিদিন গাড়ির জন্য বরাদ্দকৃত তেল পুরোটা খরচ হয় না, বেচে যাওয়া তেল বিক্রি করাই তাদের আয়।

কর্মকর্তারাও বিষয়টি তদন্ত করবে। আশা করছি যে ধরনের অপসংস্কৃতি চলে আসছে, আমরা এ থেকে বের হয়ে আসতে পারবো।

এ জাতীয় আরো সংবাদ