1. successrony@gmail.com : Mehedi Hasan Rony :
  2. arif_rashid@live.com : Arif Rashid : Arif Rashid
  3. meherunnesa3285@gmail.com : Meherun Nesa : Meherun Nesa
সোমবার, ২২ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৫৬ অপরাহ্ন

মেজর সিনহা হত্যা: ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ডাদেশ

দিনলিপি নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২২
  • ১৬৭ বার

টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যায় টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ এবং বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক লিয়াকত আলীর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

রায়ে ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। এরা হলেন- পুলিশের সাবেক উপ-পরিদর্শক নন্দদুলাল রক্ষিত, সাবেক পুলিশ কনস্টেবল রুবেল শর্মা, সাবেক সহকারী উপ-পরিদর্শক সাগর দেব এবং পুলিশের সোর্স নুরুল আমিন, মো. নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

এর মধ্যে কনস্টেবল সাগর দেব, টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিনকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের জেলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য এবং বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির চার সদস্যকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

খালাসপ্রাপ্তরা হলেন বরখাস্ত সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, বরখাস্ত কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এপিবিএনের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, বরখাস্ত কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আব্দুল্লাহ।

দুপুর ১টার দিকে মেজর সিনহা হত্যা মামলার ১৫ আসামিকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে তোলা হয়। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে রায় ঘিরে সকাল থেকেই আদালত চত্বরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ছিল।

দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে এজলাসে এসে আদালতের কার্যক্রম শুরুর পর মামলা সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক আলোচনা করেন বিচারক। এরপর শুরু করেন অপরাধের পর্যবেক্ষণ বয়ান। সাক্ষ্যপ্রমাণে কার কী অপরাধ দাঁড়িয়েছে সেসব তুলে ধরার পর হত্যায় সংশ্লিষ্টতার অপরাধ অনুসারে সাজা ঘোষণা করেন বিচারক।

নির্মম ও আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ১৮ মাসের মাথায় ঘোষণা হলো মামলার রায়। বিচারিক কার্যক্রম শুরু করে মাত্র ৩৩ কার্যদিবসে শেষ হয়েছে মামলাটির পরবর্তী কাজ।

৩০০ পৃষ্ঠার রায়ের সারসংক্ষেপ পড়ার সময় আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেন, এ হত্যাকাণ্ড ছিল পূর্বপরিকল্পিত।

রায়ের প্রতিক্রিয়া:

রায়ের পর মামলার বাদী ও নিহতের বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বলেছেন, “আমাদের প্রত্যাশা অনেকখানি পূরণ হয়েছে, সন্তুষ্টির জায়গাটা সেদিন বলব যেদিন এটা কার্যকর হবে।”

আদালতের রায়ে আংশিক সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, “কাগজপত্র হাতে পেলে ৭ জনকে বেকসুর খালাসের বিষয়ে পুনর্বিবেচনার জন্য আদালতে রিভিউ করব।”

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির ব্যাপারে আদালত বলেছেন, “হত্যা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, লাথি মারা, সহযোগিতায় হত্যা, মৃত্যু নিশ্চিত, আলামত নষ্ট, খুন ও মাদক মামলা করে অপরাধ করেছেন প্রদীপ। পাশাপাশি লিয়াকত গুলি করে হত্যা, নাটক সাজানো, হত্যার পরিকল্পনায় অংশ নিয়ে শাস্তিমূলক অপরাধ করেছেন।”

রায় শুনে আদালতের কাঠগড়ায় হট্টগোল শুরু হয়। তবে প্রদীপ ছিলেন নিশ্চুপ। বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত রায় শুনেই কান্না জুড়ে দেন।

আসামি পক্ষের আইনজীবী মহিউদ্দিন খান বলেন, “এ রায়ে তারা সংক্ষুব্ধ। রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে যাবেন।”

ঘটনাপ্রবাহ:

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরে এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যাওয়া রাশেদ ‘লেটস গো’ নামের একটি ভ্রমণবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র বানানোর জন্য প্রায় এক মাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার একটি রিসোর্টে অবস্থান করছিলেন। ওই কাজে তার সঙ্গে ছিলেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ।

কক্সবাজারের পুলিশ সে সময় বলেছিল, সিনহা তার পরিচয় দিয়ে তল্লাশিতে বাধা দেন। পরে পিস্তল বের করলে চেকপোস্টের পুলিশ তাকে গুলি করেন।

ওই বছরের ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে র‌্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়।

এই হত্যাকাণ্ড দেশব্যাপী প্রতিবাদ ও ক্ষোভের সৃষ্টি করে; তৎকালীন সেনাপ্রধান ও পুলিশপ্রধান কক্সবাজারে নজিরবিহীন এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন।

সিনহা নিহতের ছয় দিন পর লিয়াকত আলী, প্রদীপসহ সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে এই হত্যায় সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার কথা জানিয়ে টেকনাফ থানায় করা মামলার তিন সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টে ঘটনার সময় দায়িত্ব পালনকারী আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আসামিদের মধ্যে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া অন্য ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। প্রায় সাড়ে চার মাস তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব-১৫ এর কক্সবাজারের তৎকালীন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম ১৫ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

অভিযোগপত্রে থাকা ৮৩ সাক্ষীর মধ্যে ৬৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। গত বছরের ২৩ আগস্ট শুরু হয়ে আসামিদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয় ১ ডিসেম্বর। এর আগে আসামিদের তিন দফায় ১২ থেকে ১৫ দিন রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল।

সুদীর্ঘ শুনানি, জবানবন্দি ও যুক্তিতর্ক শেষে দেড় বছর পর আজ এ মামলার রায় ঘোষণা করা হলো।এদিকে কক্সবাজার আদালত চত্বরে আজ সকাল থেকেই ওসি প্রদীপ কুমার দাশের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ চলছিল।

মানববন্ধনে অংশ নেন শতাধিক ভুক্তভোগী লোকজন। তারা ‘ওসি প্রদীপের ফাঁসি চাই’ স্লোগান দেন।

মানববন্ধনে অংশ নেয়া টেকনাফ সদরের হাম জালাল ও মুরাদ হাসান জানান, ‘এখানে যারা দাঁড়িয়েছে তারা প্রত্যেকে ওসি প্রদীপের নির্যাতনের শিকার। আমরা এই খুনির সর্বোচ্চ সাজা চাই।’

এ জাতীয় আরো সংবাদ