মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে নিয়ম-নীতি ও প্রশাসনের কোন প্রকার তোয়াক্কা না করে তিন ফসলী জমির মাটি কেটে বিভিন্ন ইট ভাটায় বিক্রির মহোৎসব চলছে। উপজেলার চরাঞ্চলের লতব্দী, বালুচর ও বাসাইল ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে অবৈধ ভাবে মাটি কাটার মহোৎসবে মেতেছে অন্তত ২০-৩০ টি সিন্ডিকেট। ফসলী জমি থেকে মাটিকাটা বন্ধে প্রশাসনের জোর তৎপরতা থাকা স্বত্বেও তাদের চোখে ধুলো দিয়ে ওই সিন্ডিকেটের লোকজন ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে দিন রাত মাটি কেটে যাচ্ছে। দিন রাত চলছে ফসলী জমির মাটি কাটার কর্মযজ্ঞ।
ফসলী জমির রক্ষায় স্থানীয় এলাকাবাসীসহ সুশীল সমাজের লোকজন প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার চরাঞ্চল তথা বাসাইল, বালুচর ও লতব্দী ইউনিয়নের মধ্যবর্তী বাসাইল ও লতব্দীর চক এবং বালুচর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক তিন ফসলী জমি নাম মাত্র মূল্যে কিনে নিয়ে সেসব জমির মাটি কেটে দুই সপ্তাহের অধিক সময় ধরে বিভিন্ন ইট ভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। আর এ অবৈধ মাটি কাটার নেতৃত্ব দিচ্ছে রামকৃষ্ণদী গ্রামের মোঃ শান্ত নামে এক স্কুল শিক্ষকসহ লতব্দী, রামকৃষ্ণদী, বালুচর ও বাসাইলের স্থানীয় প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন৷ এতে ওই এলাকার কৃষকরা না চাইলেও তাদের জমি বিক্রি করতে বাধ্য হয়ে ফসল উৎপাদন করতে না পেরে অনেকটাই নির্বিকার হয়ে পরেছে। তারা মাটি কাটা বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অন্যদিকে ওই এলাকার কৃষকেরা বলছেন, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জমির মাটি কিনে নিয়ে কেটে বিক্রি করছেন। এতে তাদের ক্ষতি হলেও নানা কারণে প্রতিবাদ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাসাইল, লতব্দী ও বালুচর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থান থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দুই-তিন শতাধীক জমির মাটি কেটে নিয়ে ইট ভাটায় বিক্রি করা হয়েছে। বর্তমানেও থেমে নেই অবৈধ ভাবে মাটি কাটার কর্মযজ্ঞ। ফলে ব্যাহত হচ্ছে ওই এলাকার কৃষি পন্য উৎপাদনসহ কৃষি জমির সংখ্যা। স্থানীয়দের অভিযোগ অনেকটা জোড় জুলুম করেই কেটে নেয়া হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। ভাঙন হুমকির মুখে পরছে গভীর করে মাটি কেটে নেওয়া জমিগুলোর পার্শ্ববর্তী জমিগুলো। ওই এলাকায় প্রথম দিকে মাটি কাটার সিন্ডিকেট একটি বা দুটি দেখা গেলেও বিনা চালানের মাটি কাটার এ ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় বর্তমানে তাদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। অবৈধ ভাবে তিন ফসলী জমির মাটি কাটার অভিযোগের ব্যপারে একাধিক সিন্ডিকেটের লোকজনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাদের বেশীর ভাগ ব্যক্তি মাটি কাটার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার না করলেও অনেকে অকপটে স্বীকার করে বলেন, আমরাতো একা মাটি কাটি না, এ এলাকার আরো অনেকেইতো মাটি কাটছে তাদেরকে ধরেন! তবে সিন্ডিকেট গুলোর নেতৃত্বদানকারী মোঃ শান্ত সাংবাদিকদের সাথে কুরুচিপূর্ণ আচরণ করে বলেন, মাটি কাটা কারো বন্ধ করার ক্ষমতা নাই! আপনি/আপনারা যা লেখার লেখেন। আমাদের তাতে কিচ্ছু যায় আসে না। দেখি আমাদের মাটি কাটা কে বন্ধ করে!
সিরাজদিখান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম আক্তার এক স্বাক্ষাৎকারে অবৈধ ভাবে ফসলী জমির মাটি কাটা বন্ধে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না মর্মে উল্লেখ করে বলেন, অবৈধভাবে মাটি কাটা বন্ধে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি মাটি কাটা বন্ধে অভিযান অব্যাহত রাখা হবে।