1. successrony@gmail.com : Mehedi Hasan Rony :
  2. arif_rashid@live.com : Arif Rashid : Arif Rashid
  3. meherunnesa3285@gmail.com : Meherun Nesa : Meherun Nesa
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৪১ অপরাহ্ন

বিএনপির দুটি গুণ, ভোট চুরি ও মানুষ খুন : প্রধানমন্ত্রী

দিনলিপি নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ১৩৩ বার

চট্টগ্রামের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির দুটি গুণ, ভোট চুরি আর মানুষ খুন। নির্বাচন হলে মানুষ তাদের ভোট দেবে না। এই কারণে তারা ভোট চায় না। তারা চায় কেউ এসে তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। এটা তারা প্রত্যাশা করে। কিন্তু আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে।

রবিবার (৪ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক পলোগ্রাউন্ড মাঠে জনসভায় এমন কথা বলেন শেখ হাসিনা।

চট্টগ্রাম ও এর আশপাশের জেলাগুলো থেকে এদিন বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী জনসভায় যোগ দিয়েছিলেন। পলোগ্রাউন্ড ছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে কেন্দ্র করে।

জনসভায় প্রায় ৪৯ মিনিট বক্তব্য দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্যের শেষ প্রান্তে তিনি জনসভায় উপস্থিত সবার উদ্দেশে বলেন, ‘ওয়াদা করুন, আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দেবেন। হাত তুলে বলুন।’

এ সময় বিপুল জনতা হাত তুলে জানান তারা নৌকায় ভোট দেবেন।

দীর্ঘ ১০ বছর পর চট্টগ্রামের জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাবার সঙ্গে চট্টগ্রামে বেড়াতে আসতাম। এখানে এলে মনে পড়ে, চট্টগ্রাম ছিল সমস্ত আন্দোলনের সুতিকাগার। করোনার কারণে দীর্ঘদিন জনসভা করতে পারিনি। তাই আপনার সামনে দেরিতে হলেও হাজির হয়েছি।’

তিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে চট্টগ্রামের প্রয়াত নেতা এমএ আজিজ, এমএ হান্নান, আবদুল মান্নান, আখতারুজ্জামান বাবু ও মহিউদ্দিন চৌধুরীকে স্মরণ করেন তার বক্তব্যে।

তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘১৯৮৮ সালে জানুয়ারি মাসে জনসভা করতে এসেছিলাম। সেই সভায় নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল এরশাদ সরকার। যে পুলিশ অফিসার রফিকুল হায়দার গুলি চালিয়েছিল তাকে খালেদা জিয়া পুলিশপ্রধান করেছিল। নিশ্চয় এর সঙ্গে খালেদা জিয়ার যোগাযোগ ছিল। সেদিন ২৪ জনকে হত্যা করা হয়। মানবঢাল তৈরি করে নেতাকর্মীরা সেদিন আমাকে রক্ষা করেছিল।’

তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকে হত্যা করেছে। মৌলভী ছৈয়দকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে। একইভাবে খালেদা জিয়াও। তার আমলে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। লাশ গুম করা হয়েছে। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর চট্টগ্রামের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কেউ রক্ষা পায়নি। সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ, এটা তারা দিতে পারে। আর কিছু পারে না। স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার আল-বদর, জাতির পিতার খুনি—তারাই ক্ষমতায় এসেছে। এই কারণে দেশ আর এগোতে পারেনি।’

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট আদর্শকে বিসর্জন দেওয়া হয়েছিল। শেখ মুজিবের নাম মুছে ফেলা হয়েছিল। জয় বাংলা স্লোগান দিতে বাধা দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া, জামায়াতের সাথে হাত মিলিয়ে। ১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিল বলেই পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল। সেই কথা বিএনপির মনে রাখা উচিত বলেও বক্তব্যে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

বলেন, ‘জনগণের ভোট চুরি করলে জনগণ তা মেনে নেয় না। ওরা ভোটে যেতে চায় না। জিয়াউর রহমান যেভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল। তারা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতায় যেতে চায় না।’

তিনি বলেন, বিজয়ের মাসে অনেক উপহার নিয়ে এসেছি।

চট্টগ্রামের জন্য ২৯ প্রকল্পের নাম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এগুলো বিজয়ের মাসে আমার উপহার।’

বিএনপি মানুষ খুন করে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করে। এটা তাদের কাজ। তারা গ্রেনেড বোমা মারতে পারে। সারা বাংলাদেশজুড়ে ৬৩ জেলার ৫০০টি স্থানে বোমা হামলা করেছে বিএনপি। জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে বিএনপি। তারা বাংলাদেশের মানুষকে শান্তিতে থাকতে দেয় নাই। জনগণের অর্থ পাচার করেছে।

‘জিয়াউর রহমান ১৯৮০ সালে মারা গেছে। ৪০ দিন পর্যন্ত শুনেছিলাম ভাঙা সুইটকেস ছাড়া কিছু ছিল না। আমার প্রশ্ন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পরপরই তার ছেলে হাওয়া ভবন খুলে চাঁদাবাজির টাকা কোথায় থেকে এসেছিল। ভাঙা সুইটকেস তো আর জাদুর বাক্স হয় নাই।’

আওয়ামী লীগের মানুষের কল্যাণে কাজ করে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন, ছয় লেনে হবে। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রাস্তা হবে। রেললাইন হচ্ছে। এই চট্টগ্রামে মেডিকেল কলেজ, চারটি বিশ্ববিদ্যালয়, মেরিন একাডেমি করেছি। এমন কিছু নাই আমরা করে দিই নাই। বিএনপি জামায়াতের মতো খুনি, দুর্নীতিবাজ হবে না। আমাদের সন্তানরা মানুষের মতো মানুষ হয়ে উঠবে।’

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া এতিমের টাকা এতিমের হাতে দেয় নাই। এই কারণে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তার ছেলে একটা মারা গেছে। যে অর্থ পাচার করেছে, সিঙ্গাপুর থেকে কিছু উদ্ধার করেছি। আরেকজন কুলাঙ্গার বানিয়ে গেছে জিয়াউর রহমান। ২০০৬ সালে আর কোনোদিন রাজনীতি করবে না মর্মে মুছলেকা দিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছে। এখন লন্ডনে বসে দেশের ভেতরে বোমাবাজিসহ খারাপ কাজ করছে।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ বানিয়েছি। মোবাইল ফোন দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। বিএনপির আমলে না। বিএনপির একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী চট্টগ্রামের লোক ছিলেন। তখন একটি মোবাইল ফোন এক লাখ ৩০ লাখ টাকা লাগত। আওয়ামী লীগ এসে মোবাইল ফোন উন্মুক্ত করে দিয়েছে।’

ডিজিটাল সেন্টার করার বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সারা দেশে ডিজিটাল সেন্টারে মা বোনেরা প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন, দেখতে পারেন। আওয়ামী লীগ সরকার এটা করেছে। আমরা প্রতিটি স্কুলে ডিজিটাল ল্যাব খুলে দিচ্ছি। আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষা দিচ্ছি। আর ওরা (বিএনপি) করেছে বোমাবাজি, একুশে আগস্ট। সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর গ্রেনেড মেরেছে। ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যা করেছিল। আমরা গ্রেনেড হামলার বিরুদ্ধে র‍্যালি করতে গিয়েছিলাম, সেখানে আমাদের ওপর গ্রেনেড হামলা করল। সেখানে আইভি রহমান মারা গেছে। মানবঢাল তৈরি করে আমার নেতাকর্মীরা আমাকে বাঁচিয়েছিল।’

অগ্নিসন্ত্রাসের হিসাব নেবে জনগণ

২০১৩-১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাস করে যেসব মানুষকে হত্যা করেছে বিএনপি-জামায়াত, একদিন তাদের হিসাব জনগণ নেবে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এই জবাব একদিন খালেদা-তারেককে দিতে হবে। জনগণ হিসাব নেবে। তাদের হিসাব দিতে হবে।’

জামায়াতকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৪ সালে নির্বাচনে যাবে না। এই কারণে ২০১৩ সালে শুরু করল অগ্নিসন্ত্রাস। গাড়ি, রেলে আগুন। অগ্নিসন্ত্রাসে তিন হাজার আহত, ৫০০ নিহত। সাড়ে তিন হাজার গাড়ি পুড়েছে। মনুষ্যত্ব আছে যাদের মধ্যে, তারা কি মানুষ হত্যা করতে পারেন?’

রিজার্ভ বেড়েছে দেশে

শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ সালে যখন ক্ষমতা গ্রহণ করি তখন রিজার্ভ ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এখন ৪৮ বিলিয়ন ডলারে রিজার্ভ নিয়েছি। মানুষের জন্য খাদ্য দিয়েছি। শ্রমিকদের টাকা দিয়েছি। কৃষকদের টাকা দিয়েছি। ওষুধ, ভ্যাকসিন, সিরিঞ্জ কিনেছি। বিশেষ বিমানে ভ্যাকসিন এনেছি। মানুষকে বাঁচানোর জন্য এসব করেছি। আমেরিকা-ইউরোপ কেউ বিনা পয়সায় টিকা দেয়নি। একমাত্র বাংলাদেশে বিনামূল্যে দেওয়া হয়। এসবই জনগণের জন্য।’

‘এখন আমাদের রিভার্জ ৩৪ বিলিয়ন ডলার আছে। একটা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। ব্যাংকে টাকা নেই বলা হচ্ছে। ব্যাংকে টাকা রাখবেন। ঘরে রাখবেন না। সে টাকা চোরেও নিতে পারে। গুজবে বিভ্রান্ত হবেন না।’

‘সরকারি কর্মকর্তাদের বেতনভাতা বাড়িয়েছি। স্কুল কলেজ জাতীয়করণ করেছি। গণমুখী কাজ আওয়ামী লীগ করেছে। বিএনপি তো কাজ করেনি। উল্টো মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। অপারেশন ক্লিনহার্ট চালিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। ইনডেমনিটি দিয়ে তাদের রক্ষা করেছিল।’

গুজবে কান না দেওয়ার পরামর্শ

বিএনপিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে বলেন, ‘গুজব ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। আপনারা দয়া করে গুজবে কান দেবেন না। কান চিলে নিয়েছে শোনার পর, আগে কানে হাত দিয়ে দেখবেন কান ঠিক জায়গায় আছে কি না? সারা বাংলাদেশের মানুষকে বলছি, বাংলাদেশে বার বার ক্যু হয়েছে। ওরা অগ্নিসন্ত্রাস করেছে। বোমাবাজি করেছে। কিন্তু আমরা মানুষের কোনো ক্ষতি হতে দিইনি। যারা নিহত আহত হয়েছে তাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন করেছি। ওরা ধ্বংস করে, আমরা সৃষ্টি করি।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘মানুষের সর্বনাশ করা এটাই কি বিএনপি-জামায়াত শিবিরের কাজ? বাংলাদেশে খাদ্যের কোনো অভাব নেই। বাংলাদেশের মানুষকে খাদ্যের জন্য কষ্ট দেব না। আমাদের উৎপাদন বাড়িয়েছি। আমাদের রিজার্ভ ঠিক আছে। আমরা প্রায় দুই কোটি ৫৩ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়ে থাকি। শিক্ষাব্যবস্থাকে বহুমুখী করে দিয়েছি। মসজিদভিত্তিক শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ৫৬০টি মসজিদ কালচার সেন্টার করেছি। সম্ভবত পৃথিবীতে এটা সর্বপ্রথম হচ্ছে। প্রতি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম তৈরি করে দিচ্ছি।’

বাংলাদেশ ভালো আছে, তবে মিতব্যয়ী হোন

বিএনপি যুদ্ধাপরাধী ও খুনির দল আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তিতে বিশ্বাসী। উন্নতিতে বিশ্বাস করি। ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ধারা আছে বলেই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। কোনো মানুষ দরিদ্র থাকবে না। এখন গ্রামে বসে ফ্রিল্যান্সিং করে ঘরে বসে টাকা আয় করতে পারেন।’

‘বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক দেশ থেকে মজবুত। বিশ্বব্যাপী খাদ্যের, জ্বালানি তেলের অভাব। কিছু দিন বিদ্যুৎ নিয়ে কষ্ট হয়েছে। এখন সমস্যা হবে না। আপনাদের কাছে অনুরোধ, মিতব্যায়ী হতে হবে। তাহলে বাংলাদেশে এরকম হবে না। আপনাদের সহযোগিতা চাই। বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি তেল ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। এক ইঞ্চি জমিও খালি রাখা যাবে না। আমরা যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারি। যাতে সম্মান নিয়ে চলতে পারি, আমরা সেটাই চাই। খুনি, গ্রেনেড হামলাকারীদের হাত থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা হবে।’

কর্ণফুলী টানেল প্রসঙ্গ

কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল করে দিয়েছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিছুদিনের মধ্যে টানেল উদ্বোধন করা হবে। মানুষ যাতে আনোয়ারা হয়ে কক্সবাজার যেতে পারে। আজকে মনে পড়ে মহিউদ্দিন চৌধুরীর কথা। মহিউদ্দিন ভাই বলতেন, কর্ণফুলীর ওপর আর ব্রিজ করব না। টানেল করব। সেই টানেল দেখে যেতে পারেননি তিনি। তার জন্য দোয়া করেন।’

৪৯ মিনিটের বক্তব্য শেষ করেন আগামী সংসদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে। নৌকাকে জয়ী করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি ভাষণ শেষ করেন ৪টা ৩৬ মিনিটে।

এ জাতীয় আরো সংবাদ