বেগম খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপি আন্দোলনের নামে সহিংসতার চেষ্টা করলে সমুচিত জবাব দেয়া হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা জামিন আবেদনের ওপর আপিল বিভাগে শুনানি হবে। তাই সকালেই বিএনপির উদ্দেশে এ হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
এর আগে, বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়- সরকারি সিদ্ধান্তে খালেদা জিয়ার জামিন আটকে দেওয়া হচ্ছে। ৫ ডিসেম্বর খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে সরকার পতনের একদফা আন্দোলন শুরু হবে।
উল্লেখ্য, আজ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা জামিন আবেদনের ওপর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৬ বিচারপতির বেঞ্চে এ শুনানি হবে।
জামিন শুনানি নিয়ে শুধু বিএনপি নয়, রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ মানুষের মধ্যেও রয়েছে কৌতূহল। বিএনপির নীতিনির্ধারকসহ আইনজীবী নেতাদের আশা, শারীরিক অসুস্থতা বিবেচনায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিন পাবেন খালেদা জিয়া।
তবে আজ শুনানি হবে কি না, সেটা অনেকাংশে নির্ভর করছে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ স্বাস্থ্যগত অবস্থা নিয়ে মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্ট জমা পড়ে কি না, সেটার ওপর। এর আগের তারিখে আদালত এই মেডিকেল রিপোর্ট চেয়েছিলেন। কারাবন্দি খালেদা জিয়া অনেক দিন ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন।
এ দিকে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে বুধবার রাত ৮টা পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে কোনো প্রতিবেদন পাঠায়নি বলে জানা গেছে।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৬ বিচারপতির বেঞ্চ গত ২৮ নভেম্বর এক আদেশে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে জানাতে বিএসএমএমইউ ভিসিকে নির্দেশ দেন। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করতে বলা হয় ওই নির্দেশনায়। একইসঙ্গে গত ৭ অক্টোবর গঠিত মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্টও দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া ৫ ডিসেম্বর পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য দিন ধার্য করা হয়। এ অবস্থায় আপিল বিভাগের ওই আদেশের কপি গত ২ ডিসেম্বর বিএসএমএমইউ ভিসির কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট ভিসির কোনো জবাব পায়নি বলে জানা গেছে।
বিএনপির নেতা ও খালেদা জিয়ার মামলার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জামিনের জন্য মেডিকেল রিপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হতে পারে। যদি জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়, তা হলে আপিল বিভাগে আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদনের সুযোগ আছে। এ ছাড়া হাইকোর্টেও নতুন করে জামিন আবেদনের সুযোগ রয়েছে। যদিও সচরাচর আপিল বিভাগে জামিন আবেদন নাকচ হওয়ার পর আবার হাইকোর্টে যাওয়ার চর্চা নেই।
খালেদা জিয়া জামিন পাবেন এমন প্রত্যাশা নিয়ে আজ আদালতের ভেতরে-বাইরে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। জাতীয়তাবাদী আইনজীবীদের আদালতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দেশ না দিলেও মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা আদালতের বাইরে অবস্থান নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, আজ আদালত থেকে নেতিবাচক কোনো আদেশ এলে দ্রুত দলের নীতিনির্ধারকরা বসে পরবর্তী করণীয় চূড়ান্ত করবেন। সর্বশেষ স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা অপেক্ষায় থাকবেন। কোনো কারণে জামিন না হলে পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন তারা।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির যে মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাত বছরের সাজা হয়, এই মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন মিললেও তার কারামুক্তি হবে না। কারণ, তিনি আরও একটি মামলায় (জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা) ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত। এই মামলায়ও তার জামিনের আবেদন আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় আছে। বিএনপির আইনজীবীরা বলছেন, দ্বিতীয় মামলায় জামিন পেলে খালেদা জিয়ার কারামুক্তি হবে। এ জন্য তাদের দৃষ্টি আপিল বিভাগের দিকে। তারা মনে করেন, চ্যারিটেবল মামলায় জামিন হলে অপর মামলাটিতে খালেদা জিয়ার জামিন পাওয়া সহজ হবে।