1. successrony@gmail.com : Mehedi Hasan Rony :
  2. arif_rashid@live.com : Arif Rashid : Arif Rashid
  3. meherunnesa3285@gmail.com : Meherun Nesa : Meherun Nesa
রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪১ অপরাহ্ন

রুম্পাকে কৌশলে ছাদে নিয়ে যান সৈকত

দিনলিপি নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৯
  • ৭০৩ বার

রাজধানীর স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার (২১) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের বিবিএ শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান সৈকতের (২২)। পাঁচ মাস ধরে চলা এ সম্পর্কের ইতি টানতে চাইছিলেন সৈকত। এ নিয়ে দুজনের মতবিরোধ তৈরি হলে সৈকত তার বন্ধুদের নিয়ে রুম্পাকে কৌশলে সিদ্ধেশ্বরীর একটি বাসার ছাদে নিয়ে যান। একপর্যায়ে রুম্পাকে ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যা করা হয়। রুম্পা হত্যাকাণ্ডের সৈকতকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এমনটাই ধারণা করছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তবে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার আগে রুম্পাকে ধর্ষণ করা হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।

সৈকতকে গতকাল রবিবার আদালতে তোলা হয়। এ সময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর ডিবির রমনা জোনাল টিমের ইন্সপেক্টর শাহ মো. আখতারুজ্জামান ইলিয়াস হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে বিচারকের কাছে তার সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। ঢাকা মহানগর হাকিম মো. মামুনুর রশিদ চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এদিকে রুম্পা হত্যার বিচারের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো গতকাল রবিবারও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টায় স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা সমবেত হয়ে এ কর্মসূচি পালনকালে তারা রুম্পার মৃত্যুর তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রকাশের দাবি জানান। অন্যথায় কঠোর আন্দোলন শুরু হবে বলে হুমকি দেন।

প্রসঙ্গত, রুম্পা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সৈকত একসময় স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ছিলেন। পরবর্তী সময়ে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ভর্তি হন। গত শনিবার তাকে রাজধানীর খিলগাঁও থেকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল তাকে রমনা থানার রুম্পা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। রিমান্ড শুনানির জন্য গতকাল বেলা তিনটার দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মামুনুর রশিদের আদালতে হাজির করা হয় সৈকতকে। এ সময় কাঠগড়ায় থাকা সৈকতকে স্বাভাবিক দেখায়। তার মধ্যে কোনো বিষণ্নতা বা চিন্তার ছাপ ছিল না। সৈকতের বাবার নাম আব্দুল মতিন। গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার কাছিহাটায়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর এক প্রশ্নের জবাবে সৈকত বলেন, চার-পাঁচ মাস ধরে রুম্পার সঙ্গে আমার একটা সম্পর্ক ছিল। সর্বশেষ, ৪ ডিসেম্বর রুম্পার সঙ্গে আমার কথা হয়। এর পর আমি বাসায় চলে যাই। এ ঘটনায় আমি জড়িত নই এবং ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছু জানি না।

রুম্পা হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহ মো. আকতারুজ্জামান ইলিয়াস ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের বিষয়ে আদালতকে জানান, রুম্পার সঙ্গে সৈকতের পরিচয়সহ ভালোবাসার সম্পর্ক হয়। একপর্যায়ে এ সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ঘটনার দিন ৪ ডিসেম্বর বিকাল ৪টার দিকে সৈকতের সঙ্গে রুম্পার স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসের বাইরে দেখা হয়। তখন প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে কথা উঠলে আসামি সৈকত কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই সম্পর্ক ছিন্ন করতে রুম্পাকে অনুরোধ করলে দুজনের মনোমালিন্যসহ বিরোধ চরম আকার ধারণ করে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে সেদিন রাত পৌনে ১১টার দিকে রুম্পাকে সৈকতসহ তার সহযোগী অজ্ঞাত আসামিরা মিলে হত্যা করতে ৬৪/৪ সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোডের বাড়ির ছাদে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে রুম্পাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয় বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে হত্যার মূল রহস্য উদ্ঘাটনপূর্বক ঐ হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত, হত্যাকারীদের প্রকৃত নাম-ঠিকানা সংগ্রহপূর্বক তাদের গ্রেপ্তার, কীভাবে ও কী কারণে হত্যাকা- ঘটেছে তা নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সৈকতকে সাত দিনের রিমান্ড প্রয়োজন।

অন্যদিকে সৈকতের পক্ষের আইনজীবী আব্দুল হামিদ ভূঁইয়া তার মক্কেলের রিমান্ড বাতিল করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানিকালে তিনি বলেন, এক সপ্তাহ আগেই সৈকতের বাবা মারা গেছেন। এরও সপ্তাহখানেক আগে তার চাচা মারা যান। ঘটনার পর ডিবি পুলিশ ফোন করে ডাকলে সৈকত সেখানে উপস্থিত হন। তিনি সাদা মন নিয়ে ডিবি অফিসে যান। অথচ এ ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। বাবা হারানোর এক সপ্তাহের মধ্যে একটা ছেলের পক্ষে এ ধরনের হত্যাকা- ঘটানোর মতো মানসিক অবস্থা থাকাটা অস্বাভাবিক।

এ ছাড়া এ মেয়ের যন্ত্রণায়ই সম্প্রতি সে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে পড়াশোনার জন্য অন্যত্র ভর্তি হয়েছে। তা ছাড়া এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তাই রিমান্ডের কোনো যৌক্তিকতা নেই। এ অবস্থায় তার রিমান্ড বাতিল করে জামিনের প্রার্থনা করছি।

জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন বলেন, যেহেতু আসামিপক্ষের আইনজীবী নিজেই স্বীকার করছেন মেয়ের (রুম্পা) জন্যই আসামি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছে, সুতরাং তার সঙ্গে মেয়ের সম্পর্কের বিষয়টি তারা স্বীকার করছেন। তাই মোবাইল ফোনের কল রেকর্ড পরীক্ষাসহ প্রাপ্ত আলামত যাচাই-বাছাই করতে তাকে রিমান্ডে নেওয়া জরুরি। শুনানি শেষে সৈকতের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

ডিবি সূত্র জানায়, সৈকতের সঙ্গে রুম্পার বন্ধুত্ব ছিল। মার্চে সম্পর্ক ভেঙে যায়। এর পর রুম্পা বহুবার সৈকতের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। ঘটনার দিনও সৈকতের সঙ্গে রুম্পার দেখা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সৈকতের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মৃত্যুর দিন সৈকতের সঙ্গে সিদ্ধেশ্বরীর ওই ভবনটিতে ঢুকতে দেখা গেছে রুম্পাকে। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজে সৈকতের সঙ্গে রুম্পার ওই ভবনে প্রবেশ করার দৃশ্য পেয়েছে ডিবি। ওই দিন রাত সোয়া ১০টার দিকে রুম্পার মরদেহ পাওয়া যায় ভবনটির নিচে। বিষয়টি আত্মহত্যা না হত্যা, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য সৈকতকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।

এদিকে গতকাল স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আল হাসান সুমন বলেন, রুম্পার মৃত্যুর তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ এবং এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিচারের দাবিতে তিন দিন ধরে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে ও ক্যাম্পাসের ভেতরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। অথচ এ পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে রুম্পার মৃত্যুর বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি।

রুম্পার পরিবার জানতে চায়- কীভাবে সে মারা গেছে। আমাদের সহপাঠীর কীভাবে মৃত্যু হয়েছে- আমরাও তা জানতে চাই। এটি আত্মহত্যা নাকি খুন- এ বিষয়ে দেশবাসীও জানতে চায়। তিন দিন পার হয়ে গেলেও সে রহস্য এখনো উদ্ঘাটন করা হয়নি। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রুম্পার মৃত্যুর তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না করা হলে আমরা কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব। এর আগ পর্যন্ত আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

মানববন্ধনে রুম্পার সহপাঠীরা বলেন, আর যেন কোনো রুম্পাকে এভাবে মরতে দেখা না যায়। এ হত্যাকাণ্ডের একমাত্র বিচার হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলেই আমরা রক্ষা পাব, না হলে এ রকম নির্মম হত্যাকাণ্ড চলতেই থাকবে। অন্যকোনো ইস্যুতে যেন রুম্পা হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা না পড়ে সেদিকেও নজর রাখতে হবে।

দুই ভাই বোনের মধ্যে রুম্পা বড়। তার বাবা রোকনউদ্দিন হবিগঞ্জের একটি পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক। রুম্পা শান্তিবাগে ভাড়া বাসায় মায়ের সঙ্গে থাকতেন। ওই বাসায় তার চাচার পরিবারের সদস্যরাও থাকতেন।

এ জাতীয় আরো সংবাদ