1. successrony@gmail.com : Mehedi Hasan Rony :
  2. arif_rashid@live.com : Arif Rashid : Arif Rashid
  3. meherunnesa3285@gmail.com : Meherun Nesa : Meherun Nesa
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১১ পূর্বাহ্ন

‘জয় শ্রীরাম’ বলে ছাত্রদের ওপর গ্রেনেড ছোঁড়ে পুলিশ

দিনলিপি নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৯
  • ৩৭৭ বার

ভারতের আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক ছাত্র বিক্ষোভের সময় উত্তর প্রদেশ রাজ্যের পুলিশ ‘লাগামহীনভাবে’ মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ করেছে একটি স্বাধীন তদন্তকারী দল।

ভারতের নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের বিরুদ্ধে ছাত্র বিক্ষোভের সময় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সহিংসতা ঘটে, সেসময় পুলিশের বিরুদ্ধে ‘বর্বর আচরণ’ করার অভিযোগ করে তদন্ত দলটি- যাতে ছিলেন আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী এবং শিক্ষাবিদরা। খবর বিবিসির।

ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমটি জানিয়েছে, ছাত্রদের ব্যাপক মারধর করার সময়ে পুলিশের মুখে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি শোনা গেছে, ছাত্রদের ওপর ব্যবহার করা হয়েছে ‘স্টান গ্রেনেড’। এই গ্রেনেড সাধারণত সন্ত্রাসী হামলার সময়ে করা হয়ে থাকে। এর আঘাতে একজন ছাত্রের হাত কেটে বাদও দিতে হয়েছে।

তবে পুলিশ বলছে, ছাত্ররাই প্রথমে নিরাপত্তা বাহিনীকে আক্রমণ করেছিল এবং তারা ন্যূনতম শক্তি প্রয়োগ করেছে শুধু আত্মরক্ষার স্বার্থে।

সবশেষ খবরে জানা যায়, ভারতের রাজধানী দিল্লিসহ বিভিন্ন স্থানে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ বুধবারও অব্যাহত ছিল।

এ মাসের প্রথম দিকে পার্লামেন্টে পাস হওয়া আইনটিতে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা অ-মুসলিম অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া দ্রুততর করার কথা বলা হয়েছে।

মধ্যপ্রদেশ রাজ্যে হাজার হাজার লোক এর প্রতিবাদে এক সমাবেশ করে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথ বলেন, তার সরকার ওই রাজ্যে কখনোই এ আইন প্রয়োগ করবে না।

আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ ডিসেম্বর সংঘটিত ওই কথিত পুলিশী বর্বরতার তদন্তের জন্য ১৭ তারিখে সেখানে গিয়েছিল একটি তথ্য অনুসন্ধানী দল বা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম।

তারা বলছে, বিক্ষোভ শুরু হতেই প্রায় ২১ হাজার পড়ুয়াকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল থেকে বের করে দেওয়া হয়। তারপরই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে পুলিশ।

ওই তথ্যানুসন্ধানী দলের অন্যতম সদস্য, প্রাক্তন আমলা ও মানবাধিকার কর্মী হর্ষ মন্দার বলেন, ‘আমরা যখন ঘটনার দুদিন পরে বিশ্ববিদ্যালয়তে পৌঁছাই, চারদিকে ধ্বংসের ছবি। আমরা জানতে পারি যে এক দিনের মধ্যে ২১ হাজার ছাত্রকে হোস্টেল থেকে বের করে দেওয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘যে সহিংস ছাত্র বিক্ষোভের কথা বলা হচ্ছে, সেটা নিশ্চিত করা কঠিন। তবে যদি এটা মেনেও নেয়া হয় যে ছাত্ররা পুলিশের দিকে পাথর ছুঁড়েছিল, তাহলেও কি পুলিশকে ডেকে এনে এভাবে তাদের মার খাওয়াতে হবে? সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছে ছাত্রদের ওপর- যা শুধুমাত্র কোনো সন্ত্রাসী হামলার সময়ে ব্যবহার করা হয়। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এটা কী করে করা হল?’

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যখন তারা কথা বলেছিলেন, তাদের জবাব কী ছিল তা জানতে চাওয়া হলে মন্দার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে তারা ছাত্রদের নিরাপত্তা না দিয়ে উল্টো পুলিশ আর সরকারের সুরে কথা বলছে! যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ ডাকতেই হয়, তাহলেও তো যথেষ্ট সতর্কতার মধ্যে দিয়ে তাদের কাজ করা উচিত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার উত্তর প্রদেশ পুলিশের একজন কর্মরত অফিসার। এটা কীভাবে সম্ভব হয়?’

ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলেছেন বিবিসির সাংবাদিকরা। সে সময় ছাত্ররা জানিয়েছেন যে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জন ছাত্র গুরুতর আহত হয়েছিলেন সেদিন।

এদের মধ্যে একজন- মুহাম্মদ তারিকের হাতেই একটি গ্রেনেড শেল ফেটে যায়। তার হাত অপারেশন করে বাদ দিতে হয়েছে।

ওই ছাত্রের বন্ধু মুহাম্মদ আরশাদ যখন ফোনে কথা বলছিলেন, তখনও যে তিনি বন্ধুর ওই অবস্থা দেখার পর নিজেকে সামলিয়ে উঠতে পারেননি, তা বোঝা যাচ্ছিল।

আরশাদ জানান, ‘ঘটনার সময়ে আমি একটি বিয়ে বাড়িতে ছিলাম। সেখানেই বন্ধুর ওই অবস্থার খবর পাই। সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালে ছুটে যাই। সেখানে আরও অনেক ছাত্র আহত হয়ে এসেছিল। তবে বন্ধুর হাতের আঘাতে আমি এতটাই বিচলিত ছিলাম, যে অন্যদের দিকে তাকানোর পরিস্থিতি ছিল না। প্রাথমিক চিকিৎসার পরেই ডাক্তাররা বন্ধুর হাতের এক্সরে করাতে বলে। তারপরে তারিককে অপারেশনের জন্য নিয়ে যায়। চিকিৎসকরা পরে জানিয়েছেন যে তার হাতের একটা অংশ কেটে বাদ দিতে হয়েছে।’

পুলিশ অবশ্য তাদের ওপরে ওঠা অভিযোগগুলো মানতে চাইছে না। উল্টো ছাত্ররাই স্টান গ্রেনেড ছুঁড়েছে বলে মন্তব্য করেছে আলিগড়ের পুলিশ।

ওই ঘটনায় ২১ জন পুলিশ কর্মী আহত হয়, আর সেদিনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ২৬ জনের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগও দায়ের করা হয়। এদের মধ্যে অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের নেতাকর্মী।

 

এ জাতীয় আরো সংবাদ