1. successrony@gmail.com : Mehedi Hasan Rony :
  2. arif_rashid@live.com : Arif Rashid : Arif Rashid
  3. meherunnesa3285@gmail.com : Meherun Nesa : Meherun Nesa
রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৩২ অপরাহ্ন

আমার ওপর ভরসা রাখুন, জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী

দিনলিপি নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৮ জানুয়ারী, ২০২০
  • ৬৭৭ বার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের লক্ষ্য জাতির জীবনে নতুন জীবনীশক্তি সঞ্চারিত করা; স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে জাতিকে নতুন মন্ত্রে দীক্ষিত করে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়া।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বর্তমান সরকারের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা কী করতে চেয়েছিলাম আর কী করতে পেরেছি এ বিষয়ে সব সময়ই সচেতন। আপনারাও নিশ্চয়ই মূল্যায়ন করবেন। তবে আমরা মুখরোচক প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাসী নই। আমরা তা-ই বলি, যা আমাদের বাস্তবায়নের সামর্থ্য রয়েছে।

তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে আমরা রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা করেছিলাম। যার অন্তর্নিহিত মূল লক্ষ্য ছিল ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত করা। মাথাপিছু আয় ১২০০ মার্কিন ডলার অতিক্রম করায় বিশ্বব্যাংক ২০১৫ সালে বাংলাদেশকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে যেখানে মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার, ২০১৯ সালে তা ১ হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।

দারিদ্রের হার হ্রাস পেয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১.৫ শতাংশ। বর্তমানে দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২০.৫ শতাংশে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের হিসেব মতে ২০১০ সালে দারিদ্র্য সীমার নীচে বসবাসরত কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা ছিল ৭৩.৫ শতাংশ। ২০১৮ সালে তা ১০.৪ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। ২০১৮ সালে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে স্থান দিয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির বিকাশের প্রমাণ মেলে তার বার্ষিক আর্থিক পরিকল্পনায়। ২০০৫-৬ অর্থবছরে বিএনপি সরকারের শেষ বছরে বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৬১ হাজার কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেটের আকার সাড়ে আট গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকায়। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকায়। বাজেটের নব্বই ভাগই এখন বাস্তবায়ন হয় নিজস্ব অর্থায়নে।

জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার তুলে ধরে তিনি বলেন, গত অর্থবছরে আমাদের জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮.১৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ শতাংশের নীচে। বছরের শেষ দিকে আমদানি-নির্ভর পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি ব্যতীত অন্যান্য নিত্য-প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম স্বাভাবিক ছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার ওপর ভরসা রাখুন। আমি আপনাদেরই একজন হয়ে থাকতে চাই। জাতির পিতা আজীবন সংগ্রাম করেছেন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য, তাদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। তার কন্যা হিসেবে আমার জীবনেরও একমাত্র লক্ষ্য মানুষের মুখে হাসি ফোটানো।

শেখ হাসিনা বলেন, সাধারণ মানুষকে ঘিরেই আমার সকল কার্যক্রম। আপনাদের ওপর আমরা পূর্ণ আস্থা রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ অসাধারণ পরিশ্রমী এবং উদ্ভাবন-ক্ষমতাসম্পন্ন।

তিনি আরও বলেন, বাঙালি জাতি বীরের জাতি। ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা এদেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি। এমন জাতি পৃথিবীতে কোনদিন পিছিয়ে থাকতে পারে না। আমরাও আর পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। আসুন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে আমরা দল-মত নির্বিশেষে সকলে মিলে তার স্বপ্নের ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার জন্য নতুন করে শপথ নেই।

ভাষণের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুলভোটে বিজয়ী হয়ে গত বছরের ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে চতুর্থবারের মত সরকার গঠন করে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমার চতুর্থবার শপথ নেয়ার এক বছরপূর্তি উপলক্ষে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি আজ। আপনাদের সবাইকে খ্রিষ্টীয় নতুন বছরের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমি এই শুভক্ষণে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করছি জাতীয় চার-নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহিদ এবং দুই লাখ নির্যাতিত মা-বোনকে। মুক্তিযোদ্ধাদের আমি সালাম জানাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি গভীর বেদনার সঙ্গে স্মরণ করছি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের শিকার আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তিন ভাই – মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল ও দশ বছরের শেখ রাসেল- কামাল ও জামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, আমার চাচা মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জামিল এবং পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এএসআই সিদ্দিকুর রহমানসহ সেই রাতের সব শহিদকে।

তিনি আরও বলেন, এই উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক ও গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, স্মরণ করছি ২০০৪ সালের ২১-এ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নিহত আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভী রহমানসহ ২২ নেতা-কর্মীকে। স্মরণ করছি ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতাসীন হওয়ার পর নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টার, মঞ্জুরুল ইমাম, মমতাজ উদ্দিনসহ ২১ হাজার নেতাকর্মীকে।

তিনি বলেন, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নি সন্ত্রাস এবং পেট্রোল বোমা হামলায় যারা নিহত হয়েছেন, আমি তাদের স্মরণ করছি। আহত ও স্বজনহারা পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধিসহ যেসব বিশিষ্ট ব্যক্তি মারা গেছেন, আমি তাদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।

উল্লেখ্য, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ ‘মুজিব বর্ষ’ ঘোষণা করেছে সরকার। আগামী ১৭ই মার্চ বর্ণাঢ্য উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালা শুরু হবে।

আগামী ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে রাজধানীর পুরাতন বিমানবন্দরে এক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে মুজিব বর্ষের কাউন্টডাউন শুরু হবে।

এ জাতীয় আরো সংবাদ