বাসযোগ্য অত্যাধুনিক ঢাকা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবে এ ইশতেহার উপস্থাপন শুরু করেন তিনি। তার ১৩ দফার ইশতেহারে ১৪৪টি প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
ইশতেহারের উল্লেখযোগ্য প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে- দুনীতিমুক্ত প্রাতিষ্ঠানিক সেবা, সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধ গড়ার জন্য কাজ করা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানবাধিকার রক্ষা এবং ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সম্মিলনে মাদকমুক্ত, যানজট-দূষণমুক্ত, মশা ও জলাবদ্ধতামুক্ত, ভারসাম্যমূলক ও পরিবেশসম্মত বিশ্বমানের বাসযোগ্য অত্যাধুনিক ঢাকা গড়ে তোলা।
আরও রয়েছে- বারবার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও রোড ডিভাইডার ভাঙার ফলে সম্পদের ক্ষতি ও জনদুর্ভোগ বন্ধ করা, ফুটপাথ ও ফ্লাইওভারের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, পথচারী পারাপারে জেব্রা ক্রসিংগুলোতে ডিজিটাল পুশ বাটন চালু, সিগনালিং সিস্টেম চালু, নারীদের পৃথক ও নিরাপদ বাস সার্ভিস চালু, যানজট নিরসনে আন্ডারগ্রাউন্ড টানেল নির্মাণ, দ্রুতগামী ইলেকট্রিক্যাল বাস সার্ভিস ও স্মার্ট বাস স্টেশন নির্মাণ, যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ৫০ বছরের দীর্ঘমেয়াদী সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ ইত্যাদি।
নাগরিক স্বাস্থ্যসেবায় পার্ক ও ব্যায়ামাগারে অত্যাধুনিক ‘প্রাইমারি হেলথ চেকআপ সেন্টার’ স্থাপন, বিষ ও ফরমালিনমুক্ত খাদ্যপণ্য নিশ্চিতকরণ, নিয়মিত মশক নিধন কর্মসূচি পালন, মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন, যুব সমাজের জন্য ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টির মাধ্যমে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা, কমিউনিটি হাসপাতালগুলোতে নারীদের মাতৃত্বকালীন এবং পাঁচ বছর পর্যন্ত সব শিশুর বিনা খরচে চিকিৎসা নিশ্চিত করা ইত্যাদি।
বিভিন্ন স্কুল ও কমিউনিটি সেন্টারে নৈশশিক্ষা কার্যক্রম চালু করা, এলাকার উন্নয়নে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সম্পৃক্তকরণ, শিক্ষার্থীদের চলাচলে অত্যাধুনিক স্টুডেন্ট বাস সার্ভিস চালু, দরিদ্র্য ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্যে ‘নগর শিক্ষাবৃত্তি’ চালু করা ইত্যাদি শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নের ইশতেহার।
নগরে ধুলোবালি ও শব্দদূষণ প্রতিকারে আধুনিক ব্যবস্থা গ্রহণ, দূষণমুক্ত নগর গড়ে তুলতে ‘সোর্স কন্ট্রোল’, ডিএসসিসির নিজস্ব ভূমিতে বৃক্ষরোপন ও নগরকৃষি ব্যবস্থা চালু করা ইত্যাদি উদ্যোগ গ্রহণের কথা ইশতেহারে বলা হয়েছে।
নাগরিক বিনোদনের কথা মাথায় রেখে বুড়িগঙ্গা দূষণমুক্ত করা, নদীর তীরে ওয়াকওয়ে নির্মাণ, ডিএসসিসির অধীনস্থ শিশু পার্কসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ, পুরান ঢাকার ঐতিহ্য ও স্থাপনাশৈলী অক্ষুন্ন রেখে সংস্কার ও আধুনিক পর্যটন সুবিধা নিশ্চিত করা, ডিএসসিসি’র অধীনে থাকা উন্মুক্ত উদ্যানগুলোর পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা, বেদখলে থাকা উদ্যান-খাল-নদী উদ্ধার, ক্রীড়া উন্নয়নে বিভিন্ন টুর্নামেন্টের আয়োজন ইত্যাদি।
তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধিতে জনগণকে সম্পৃক্তকরণ, বয়স্কদের জন্যে ‘সিনিয়র সিটিজেন’ সার্ভিস চালু করা, ই-বর্জ্যসহ যাবতীয় ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম গড়ে তোলা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ পাবলিক প্লেসগুলোতে ফ্রি অ্যান্ড সেফ ওয়াইফাই সুবিধা প্রদান, জনসচেতনতামূলক কমিউনিটি রেডিও স্টেশন স্থাপন, স্মার্ট স্কুল স্থাপন ইত্যাদি।
সমাজসেবা কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে- গার্মেন্টকর্মীদের জন্যে হাসপাতাল ও ডে-কেয়ার সেন্টার নির্মাণ, দ্রুত সেবাদানের লক্ষ্যে ‘মোবাইল মেডিক্যাল ইউনিট’ চালুকরণ, পুরান ঢাকার পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মতো ওয়ার্ড ভিত্তিক নাগরিক কমিটি গঠন, অসহায় পথশিশু ও নারীদের জন্যে আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন, বিদ্যমান প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্র উন্নয়ন ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নতুন কেন্দ্র স্থাপন, গার্মেন্টশিল্পে কর্মরত বিশেষ করে নারীকর্মীদের জন্যে দিবা-রাত্রি নিরাপদ আবাসন ও যাতায়াতব্যবস্থা গড়ে তোলা, অবৈধভাবে দখলকৃত জমি পুনরুদ্ধার করে তাতে বস্তিবাসী ও বাস্তুভিটাহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসিত করা ইত্যাদি।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা, নাগরিকদের নৈতিকতার শক্তি পুনরুদ্ধার, গ্রন্থাগার ও জাদুঘর গড়ে তোলা এবং নগর পরিকল্পনা ও প্রশাসন ঢেলে সাজাতেও নানা প্রতিশ্রুতির কথা বলা হয়েছে।
ইশরাকের ইশতেহার উপস্থাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপি, ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা।