1. successrony@gmail.com : Mehedi Hasan Rony :
  2. arif_rashid@live.com : Arif Rashid : Arif Rashid
  3. meherunnesa3285@gmail.com : Meherun Nesa : Meherun Nesa
রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৩৮ অপরাহ্ন

বিশেষ প্রক্রিয়ায় খালেদার সম্মতি

দিনলিপি নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
  • ৭১২ বার

খালেদা জিয়া কারাগার থেকে জীবন্ত অবস্থায় বের হতে ইমার্জেন্সিচিকিৎসা ও মুক্তি চান। পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে দলকে কার্যত পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। করা হবে বিশেষ আবেদন।
খালেদা জিয়ার পরিবারের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র আমার সংবাদকে জানিয়েছেন, আজ অথবা আগামীকাল রোববার আবেদনটি জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে পৌঁছানো হবে। আর এ প্রক্রিয়ায় পর্দার আড়ালে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির কয়েকজন শীর্ষ নেতা।

আর সামনে থেকে সকল প্রক্রিয়া রয়েছেন খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার ও পরিবারের সদস্যরা। বিশেষ আবেদন প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম গণমাধ্যমকে সরাসরি বলেছেন, ‘আমরা তাকে (খালেদা জিয়া) মুক্ত করতে চাই। এ ব্যাপারে তিনিও দ্বিমত করবেন না। কারণ, তার শরীর অত্যন্ত খারাপ। এই মুহূর্তে তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।’
গত মঙ্গলবার বিকেলে পরিবারের সদস্যরা বিএসএমএমইউ হাসপাতালে খালেদা জািয়ার সঙ্গে দেখা করেন। সাক্ষাতে বোন সেলিমা রহমানের সঙ্গে খালেদা জিয়া বিশেষ আবেদনের বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন।

তিনি আইনজীবীদের ভাষ্য দিয়ে সেলিমা রহমানের কাছে জানতে চেয়েছেন, সাজা মওকুফের বিশেষ আবেদন করলেই যে সরকার তা রাখবে, সে নিশ্চয়তা কোথায়? খালেদা জিয়া পরিবারের সদস্যদের এও বলেছেন, সাজা মওকুফের বিশেষ আবেদন আর প্যারোলে মুক্তির আবেদনের মধ্যে নীতিগত তেমন পার্থক্যও নেই।

তবে আবেদনের বিষয়টি খালেদা জিয়া নাকচ করেননি। মৌন সম্মতি দিয়েছেন। সেলিমা ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়ার বিছানা থেকে বাথরুম দুই-তিন হাত জায়গা হবে তা যেতে ২০ মিনিট সময় লাগে। এখানে যে চিকিৎসা হচ্ছে তাতে তার শারীরিক কোনো উন্নতি হচ্ছে না। তিনি উঠে দাঁড়াতে পারেন না। হাঁটতেও পারেন না। একটু হাঁটলে আবার তাকে বিশ্রাম নিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় সরকারের কাছে আমরা তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।

২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের পর সেনা সমর্থিত ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দীন সরকারের আমলে বিশেষ জেলে আটক ছিলেন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের ১৮ জানুয়ারি তার মা মারা যায়। ওই সময় প্যারোলে মুক্তি পেয়ে মায়ের লাশ দেখেছিলেন তিনি।

এদিকে গত পাঁচ বছরের সাজার মধ্যে খালেদা জিয়া ইতোমধ্যে প্রায় দু’বছর সাজা ভোগ করেন। এছাড়া তিনি বয়স্ক নারী, গুরুতর অসুস্থ, সাবেক সেনাপ্রধানের স্ত্রী, তিনবারের প্রধানমন্ত্রীর এসব দিকগুলো বিবেচনা করে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে রাষ্ট্র ইতিবাচক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।

এছাড়া গত মাসের ১৪ তারিখে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের আবেদন করা হলে সরকার বিবেচনা করবে। এরপর থেকেই এ বিষয়টি ফের নতুনভাবে সামনে আসে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কেবিনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও গয়েশ্বরচন্দ্র রায় সাক্ষাৎ করেন।

তখন মূল অ্যাজেন্ডাই ছিলো নেত্রী প্যারোলে আবেদন করবে কি-না। কারণ আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্তির সম্ভাবনা খুবই কম। তখন তিন নেতার মধ্যেই পক্ষ-বিপক্ষে মতামত আসায় বিশেষ আবেদনের বিষয় খালেদা জিয়া নাকচ করে দেন।

এরপর থেকে দলটির শীর্ষ নেতারাও পক্ষে-বিপক্ষে সভা-সেমিনারে নেতিবাচক বক্তব্য দেন। খালেদা জিয়ার মুক্তি জন্য স্বেচ্ছায় কারাবরণসহ বড় কর্মসূচি চাইলেও দলটির নীতি নির্ধারকরা ভবিষ্যৎ ক্ষমতার চিন্তায় ও আন্দোলন ব্যর্থতার ভয়ে কোনো কর্মসূচি দেননি।

এখন খালেদা জিয়াকে জীবন্ত অবস্থায় পেতে তৃণমূলের বড় অংশের চাপ থাকায় পুরনো পথেই বিএনপিকে হাঁটতে হচ্ছে। ৭৪ বছর বয়সি খালেদা জিয়া এখন অন্যের সাহায্য ছাড়া হাঁটাচলা, এমনকি খেতেও পারেন না। জীবন সংকটের আশঙ্কা করছে পরিবার। জীবন্ত অবস্থায় খালেদা জিয়াকে আর না পাওয়ার শঙ্কাও প্রকাশ করছেন।

এদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো আবেদন আসেনি বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফোন করেছিলেন।

তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে গতকালও কথা বলে জানতে পেরেছি, আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো আবেদন আসেনি। খালেদা জিয়ার পরিবারের লোকজন ও দলের লোকেরা বিচ্ছিন্নভাবে তার মুক্তির বিষয়ে কথা বলছেন।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিব খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের আবেদনটা জানাতে বলেছেন, মৌখিকভাবে। আমি সেটা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি। আমি এটুকু বলতে পারি, এ ছাড়া কোনো লেনদেন বা কথাবার্তা হয়নি। কাল টকশোতে শুনলাম, তলে তলে আলোচনা অনেক দূর এগিয়ে গেছে, আমার মনে হয় বাস্তবে বিষয়টা তেমন কিছু নয়।’

খালেদা জিয়ার দল কিংবা পরিবার যদি আবেদন করেন তবে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে; জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘যদিটা পরে দেখা যাবে।’ আমাদের বক্তব্য হচ্ছে— প্যারোলের আবেদনের সঙ্গে বিষয়টির মিল আছে কি-না, এটা খতিয়ে দেখা।

তাদের আবেদন খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি দেয়ার জন্য যৌক্তিক কি-না, এ বিষয়টি অবশ্যই দেখা হবে। ‘যেহেতু খালেদা জিয়াকে আদালত দোষী ঘোষণা করেছে, কাজেই মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্টটা আদালতের কাছেই যেতে হবে।’

এ ব্যাপারে মতামত জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘জীবিত খালেদা জিয়া আমাদের কাছে বেশি প্রয়োজন। সুতরাং স্বজনরা যদি খালেদা জিয়ার প্যারোলের ব্যাপারে আবেদন করেন এবং ম্যাডাম যদি সেটা মেনে নেন, তাহলে আমাদের কিছু বলার থাকবে না।’

খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সব প্রক্রিয়ায় চেষ্টা চলছে জানিয়ে এর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ২০ দলীয় জোটের এক সমাবেশে বলেছেন, নেত্রীর মুক্তির জন্য সব প্রক্রিয়ায়ই চেষ্টা চলছে।

এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গেও দলের নেতাদের যোগাযোগ হয়েছে, কথা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ায়ও তার মুক্তির চেষ্টা চলছে। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ আমার সংবাদকে বলেন, অত্যন্ত বাস্তব যে, আমরা আমাদের নেত্রীকে আন্দোলনে মুক্ত করতে পারিনি।

তিনি কারাগারে মানবিক অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। ওনার পরিবার তাঁর সঙ্গে দেখা করেছে। মিডিয়াতে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। আমরাও খবর নিয়েছি ওনার শারিরিক অবস্থা প্রতিদিন খারাপ হচ্ছে। ওনার এখন জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসাসেবা দরকার।

পিজি হাসপাতালে ওনার এ চিকিৎসা হবে না। সারা দেশের নেতাকর্মীরা এখন ম্যাডামের মুক্তি চাচ্ছেন। এখন ওনার মুক্তিটাই আমাদের মূল প্রায়োরিটি হয়ে গেছে। প্রতিহিংসার কারণে উনি জেলে আছেন। প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছে না বিদায় খালেদা জিয়ার মুক্তি হচ্ছে না এটি এখন সারা দেশের মানুষ জানেন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন আমার সংবাদকে বলেছেন, খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের জন্য আবেদনের দরকার নেই। এটা সরকারের একক ক্ষমতা। খালেদা জিয়া যেহেতু গুরুতর অসুস্থ। এটা আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি।

আদালত তার উন্নত চিকিৎসার কথা বলছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সুযোগ সুবিধার অভাব রয়েছে। যেহেতু খালেদা জিয়া সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, এখানে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। এ পরিস্থিতিতে সরকার তার জামিন স্থগিত করে দিয়েও মুক্তির ব্যবস্থা করতে পারে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক— সুজন সম্পাদক অধ্যাপক বদিউল আলম মজুমদার এ বিষয়ে আমার সংবাদকে বলেন, আমার মনে হয় তারা এ ব্যাপারে অতীতে অনেকবার নানাভাবে আবেদন করেছে। আদালতের জামিন দেয়ার ব্যাপারে এখতিয়ার রয়েছে। আদালত ইচ্ছা করলে জামিন দিতে পারতো, কিন্তু আদালত দেয়নি। দুর্ভাগ্যজনক, আমাদের দেশে তো আদালত স্বাধীন নয়, এটা তো আদালতের ওপর নির্ভর করে।

এ জাতীয় আরো সংবাদ