1. successrony@gmail.com : Mehedi Hasan Rony :
  2. arif_rashid@live.com : Arif Rashid : Arif Rashid
  3. meherunnesa3285@gmail.com : Meherun Nesa : Meherun Nesa
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৮:৫৫ পূর্বাহ্ন

কমিটি গঠনে উপেক্ষিত হাইকমান্ডের নির্দেশনা

দিনলিপি নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ৪৯৭ বার

দলীয় কাউন্সিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কারণে যেন কাউকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া না হয়। দলের জন্য নিবেদিত ও ত্যাগীদের যেন মূল্যায়ন করা হয়। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে এমন বার্তা দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া মাইম্যান দিয়ে কমিটি না করে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করার কথা বারবার বলে আসছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন।

সম্প্রতি ঘোষিত কয়েকটি কমিটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের এসব নির্দেশনা পুরোপুরি আমলে নেওয়া হচ্ছে না। সারা দেশে আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৩২ জেলার সম্মেলন সম্পন্ন করেছে দলটি। এর মধ্যে সম্প্রতি ৮ জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আরও কিছু কমিটি ঘোষণা করার অপেক্ষায় রয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। ঘোষিত কয়েকটি কমিটিতে হাইকমান্ডের নির্দেশনা সরাসরি উপেক্ষা লক্ষ করা যাচ্ছে। বিশেষ করে সর্বশেষ ঘোষিত ফেনী জেলা কমিটি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কমিটি নিয়ে এরই মধ্যে বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত ৯ ডিসেম্বর ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল বুধবার বিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেন। গত বছরের ২৬ অক্টোবর ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট আকরামুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক পদে নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপির নাম ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীকালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান আকরামুজ্জামান। এরপর অনুমোদিত কমিটিতে সভাপতির শূন্যপদে সদ্য সাবেক কমিটির সহ-সভাপতি হাফেজ আহম্মদকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়।

কিন্তু কেন্দ্রের নির্দেশনা থাকার পরেও সম্মেলনের সময় শীর্ষ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন এমন নেতাদের এ কমিটিতে কোনো পদ দেওয়া হয়নি। এমনকি চরম দুঃসময়ে দলের জন্য দুই হাত খোয়ানো ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোজাম্মেল হক বাহারের মতো নেতারা এই কমিটিতে স্থান না পেলেও জাতীয় পার্টি থেকে এসেই জেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। তাকে জেলা আওয়ামী লীগের বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক করা হয়। তিনি ছিলেন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি। এছাড়া ফেনী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি এম আজহারুল হক আরজু সম্মেলনের সময় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কারণে তাকে কমিটিতে কোনো পদ দেওয়া হয়নি। অথচ জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্মম নির্যাতনের সঙ্গে যুক্ত হাজী আলাউদ্দিনকে জেলা কমিটির সদস্য করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে ফেনীর রাজনীতিতে বাহার ও আরজুর মতো বহু ত্যাগী নেতাকে বঞ্চিত করা হয়েছে শুধু গ্রুপিংয়ের রাজনীতির কারণে।

জানতে চাইলে এম আজহারুল হক আরজু আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, শুধু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কারণে আমাকে কমিটিতে রাখা হয়নি। আমার মতো বহু ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে নব্য আওয়ামী লীগারদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি হাইকমান্ড বিবেচনা করবেন বলে আমার মতো ত্যাগী নেতারা বিশ্বাস করে।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও দীর্ঘদিন ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মোর্শেদ আলম আক্ষেপ করে আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, নেত্রীর সরাসরি নির্দেশনা ছিল দলের মধ্যে পক্ষ বিপক্ষ থাকবে কিন্তু দলের জন্য যারা ত্যাগী, নিবেদিত তাদের কমিটিতে রেখে সমন্বয় করে কমিটি দিতে হবে। কিন্তু এখানে তার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। দুর্দিনের বহু ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে অন্য দল থেকে আসাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। দলের ত্যাগী নেতারা কর্মীরা এসব ঘটনায় হতাশ।

জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম হাজারী আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, কমিটিতে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। কোনো বিতর্কিত ব্যক্তিকে কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়নি। জাতীয় পার্টি থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদ ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার জন্যই তাদের কমিটিতে রাখা হয়েছে দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে আলোচনা করেই।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এই কমিটি নিয়েও স্থানীয় আওয়ামী লীগে ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। ছাত্রলীগের মতো সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করে আসা ত্যাগী ও পোড়-খাওয়া নেতাদের পদ দেওয়া না হলেও বিএনপি পরিবারের সন্তান ও যুদ্ধাপরাধীদের ঘনিষ্ঠ পরিবারের সদস্যকে পদ দেওয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদ- পাওয়া সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সাফাই সাক্ষী কাইয়ুম রেজা চৌধুরীর মেয়ে জারা মাহবুবকে জেলা আওয়ামী লীগে পদ দেওয়া হয়েছে। একাত্তর সালে আলবদর কমিটির সদস্য হিসেবে পরিচিত হাবিবুর রহমান মজনুকেও জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। এছাড়া দলের সাবেক ছাত্রনেতা ও যুবনেতারা পদ না পেলেও পদ দেওয়া হয়েছে সাম্যবাদী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল উদ্দীনকে। তাকে সদস্য করা হয়েছে। এছাড়া এলাকার রাজনীতি সক্রিয় এমন অনেকেই বাদ পড়লেও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মেসবাহুল সাকের জ্যোতিকে করা হয়েছে সাংগঠনিক সম্পাদক। এছাড়া ভাই-ভাতিজাসহ পরিবারের ছয়জনকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়েছেন জেলার সভাপতি মইনুদ্দীন ম-ল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য আবদুল মতিন আক্ষেপ করে আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, যারা অতীতে নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করেছে এমন লোকও কমিটিতে পদ পেয়েছে কিন্তু আমরা যারা সারা জীবন দলের জন্য নিবেদিত ছিলাম তাদের পদ দেওয়া হয়নি। এ কমিটিতে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। কখনও আওয়ামী লীগ করেনি, এমনকি যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন পরিবারের সদস্যও পদ পেয়েছে। এটা চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজনীতির জন্য কতটুকু ভালো হলো তা ভাববার বিষয়।

এসব প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মইনুদ্দীন ম-ল আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, কমিটিতে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সাফাই সাক্ষী কাইয়ুম রেজা চৌধুরীর মেয়ে জারা মাহবুবকে পদ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা কেন্দ্র থেকে দেওয়া হয়েছে আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।

যদিও রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, এটা স্থানীয়দের মাধ্যমে হয়েছে। কেন্দ্র থেকে কারও নাম সুপারিশ করা হয়নি। এ বিষয়ে স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলতে পারবেন।

ফেনী ও চাঁপাই নবাবগঞ্জের মতো খুব বেশি বিতর্ক না থাকলেও সম্প্রতি ঘোষিত বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের কিছু কিছু ব্যক্তিকে পদ দেওয়া নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। রাহুল গাজী নামে একজনকে জেলা কমিটির সদস্য করায় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। তিনি বিভিন্ন সময় সরকারবিরোধী বিভিন্ন বিষয় ফেইসবুকে শেয়ার দিতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এ জাতীয় আরো সংবাদ