সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত এবং ক্ষমতা দখল করায় মিয়ানমারের সঙ্গে উচ্চ-পর্যায়ের রাজনৈতিক ও সামরিক যোগাযোগ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিউজিল্যান্ড। সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন এই ঘোষণা দেন।
‘নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগে’ গত সপ্তাহে মিয়ানমারের শক্তিশালী সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থান ঘটায়। গ্রেপ্তার করা হয় বিপুল ভোটে নির্বাচিত মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চিসহ তার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের। এতে করে দীর্ঘদিন পর দেশটিতে শুরু হওয়া গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আবার থমকে গেছে। এরপর দেশটিতে শুরু হয়েছে ব্যাপক বিক্ষোভ।
এদিকে মিয়ানমারের সঙ্গে উচ্চ-পর্যায়ের রাজনৈতিক ও সামরিক যোগাযোগ স্থগিতের পাশাপাশি দেশটির সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে নিউজিল্যান্ড। এছাড়া মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে দেওয়া বিভিন্ন ধরনের সহায়তাও বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।
সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডে বসে (সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে) আমাদের যা করার আছে; সেটা আমরা করতে চাই। এই বার্তা আমি তাদের দিতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে বিশেষ অধিবেশন ডাকার জন্য অন্য দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করছে নিউজিল্যান্ড।’
এদিকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদ, অং সান সু চির মুক্তি ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে বিক্ষোভ করছে মিয়ানমারের মানুষ। সোমবার টানা তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ হয় দেশটিতে। এছাড়া রাজপথে বিক্ষোভের পাশাপাশি কর্মজীবীরা দেশব্যাপী ধর্মঘটে নামায় আন্দোলন পায় নতুন মাত্রা।
সোমবার বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানায়, রাজধানী নেপিদোতে জড়ো হওয়া লাখ লাখ মানুষের ওপর পুলিশ জল কামান ব্যবহার করেছে বলে একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে। ফুটেজে দেখা যায়, সু চির মুক্তির দাবিতে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের একটি অংশের ওপর হঠাৎই জলকামান ব্যবহার শুরু করে পুলিশ। এতে কয়েকজন আহত হন।
বিবিসি জানিয়েছে, বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মানুষের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক, আইনজীবী, ব্যাংক কর্মকর্তা এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ইয়াঙ্গুন শহরের প্রাণকেন্দ্র সুলে প্যাগোডা এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন হাজারখানেক শিক্ষক-শিক্ষিকা। এছাড়া কাজ বন্ধ করে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে যোগ দিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে চলছে অনলাইন প্রচারণাও।
সমাবেশে বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং দেশটির ডি-ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চির মুক্তির দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা। একইসঙ্গে বিক্ষোভকারীরা ‘সামরিক স্বৈরশাসক, ব্যর্থ, ব্যর্থ’, ‘গণতন্ত্র, জয়, জয়’ স্লোগান দেন; তাদের হাতে ‘সামরিক স্বৈরশাসক নিপাত যাক’ ব্যানারও দেখা যায়।
এদিকে মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহৎ শহর মান্দালাইয়ের বেশ কিছু এলাকায় সোমবার মার্শাল ল জারি করেছে সামরিক জান্তা সরকার। একইসঙ্গে মিয়ানমারজুড়ে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ আরও জোরালো হওয়ার পর যাতে আর কোনো বিক্ষোভ না হয় এ ব্যাপারেও হুঁশিয়ার করে সামরিক বাহিনী।
বিবিসি জানিয়েছে, দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালাইসহ দেশটির আরও বেশ কিছু স্থানে রাত ৮টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে। কারফিউ চলাকালীন একসঙ্গে পাঁচ জন বা এর বেশি মানুষের জড়ো হওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। মান্দালাইয়ের একটি উপশহর কর্তৃপক্ষ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ‘পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত নির্দেশ বলবৎ থাকবে।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কিছু মানুষ উদ্বেগজনক আচরণ করছে যা জনসাধারণ এবং আইন প্রয়োগের সুরক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ জাতীয় আচরণ স্থিতিশীলতা, মানুষের সুরক্ষা, আইন প্রয়োগকারী এবং গ্রামগুলোর শান্তিপূর্ণ অস্তিত্বকে প্রভাবিত করতে পারে এবং দাঙ্গা সৃষ্টি করতে পারে। এ কারণেই এই আদেশের মাধ্যমে জনসমাবেশ, জনসমক্ষে কথা বলা, যানবাহনের মাধ্যমে সমাবেশ করে বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’