বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চিকে মুক্তি দিতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল। সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে মিয়ানমারজুড়ে লাখ লাখ মানুষের বিক্ষোভের মধ্যেই সংস্থাটি এ দাবি জানাল।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের আহ্বানে বিরল বিশেষ অধিবেশনে বসে হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল। বিশেষ এই অধিবেশনে সংস্থাটি ‘নির্বিচারে আটকের শিকার’ সকল ব্যক্তির মুক্তি এবং ‘নির্বাচনে বিজয়ী সরকারের কাছে’ ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়ে প্রস্তাব পাস করে।
সামরিক অভ্যুত্থানের পর অং সান সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ সাড়ে তিনশোর বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে
অধিবেশনের শুরুতে জাতিসংঘের ডেপুটি রাইটস চিফ নাদা আল-নাশিফ বলেন, ‘(মিয়ানমারের অবস্থা) সারা বিশ্ব দেখছে।’ তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারির এক তারিখে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর অং সান সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ সাড়ে তিনশোর বেশি মানুষকে আটক করেছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। এদের মধ্যে রয়েছে, কর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী এবং সন্ন্যাসী।
আল নাশিদ আরও বলেন, ‘সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে মানুষের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ও মতামত প্রকাশের অধিকারকে দমাতে চলতি সপ্তাহে কঠোর সব পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটির সামরিক কর্মকর্তারা। এমনকি আন্দোলন ভণ্ডুল করতে প্রাণঘাতী অস্ত্রেরও ব্যবহার করা হচ্ছে।’
তার অভিযোগ, এতো কিছুর পরও বার্মিজ সামরিক বাহিনীর মিত্র বলে পরিচিত চীন ও রাশিয়া মিয়ানমারের এই পরিস্থিতিকে ‘দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে অভিহিত করার চেষ্টা করছে।
এদিকে মিয়ানমারের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় শহর মাওলামাইনে শুক্রবার সামরিক জান্তা সরকারবিরোধী বিক্ষোভে পুলিশ রাবার বুলেট ছোঁড়ে। এতে তিনজন আহত হন।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানায়, শুক্রবার সকাল থেকেই মাওলামাইনের প্রধান সড়কগুলোতে অবস্থান করে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করছিলেন হাজার হাজার মানুষ। পুলিশ বাধা দিতে এলে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে বিক্ষোভকারীদের। একপর্যায় পুলিশ রাবার বুলেট ছুঁড়লে তিন বিক্ষোভকারী আহত হন। আহতদের একজন নারী ও দু’জন পুরুষ। আহত ওই নারীর পেটে রাবার বুলেটের আঘাত লেগেছে, বাকি দু’জনের একজন গালে এবং অপরজন বাহুতে আঘাত পেয়েছেন।
এছাড়া একইদিন দেশটির প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনে কয়েক শ’ ডাক্তার ও নার্স তাদের পেশাগত ইউনিফর্ম পরে মিয়ানমারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধমন্দির শিউডাগন প্যাগোডা এলাকায় মিছিল ও সমাবেশ করেন। শহরের অপর প্রান্তে দেশের ফুটবল টিমের জার্সি পরে প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ডসহ মিছিল করেন অন্য একদল বিক্ষোভকারী।
মাওলামাইন, ইয়াঙ্গুন ছাড়াও দেশটির রাজধানী নেইপিদো, সমুদ্র উপকূলবর্তী শহর দাওয়েই এবং মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় কাচিন রাজ্যের রাজধানী মাইতকিয়ানাতেও শুক্রবার বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সু চির সমর্থকরা।
সূত্র: আলজাজিরা