‘বরিশাল পটুয়াখালী মহাসড়কে পায়রা নদীর ওপর পায়রা সেতু (লেবুখালী)’ নির্মাণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের পর এখন পর্যন্ত সেতু নির্মাণের নকশা পরিবর্তনসহ প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে দফায় দফায়। বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী গত জানুয়ারিতে প্রকল্পটি সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। সচিবের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বরিশাল পটুয়াখালী মহাসড়কে পায়রা নদীর ওপর পায়রা সেতু (লেবুখালী) নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদনের পর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োগে ৩ বছর ৮ মাস বিলম্ব হয়েছে। মূল সেতু ও নদীতীর রক্ষা কাজের ডিজাইনে পরিবর্তনের নামে অতিরিক্ত ১৪ মাস সময় অতিবাহিত করা হয়েছে। ফলে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ১ হাজার ৩৩ কোটি টাকা, যা মূল ব্যয়ের চেয়ে ২৫০ শতাংশ বেশি।
প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, বরিশাল-পটুয়াখালী জাতীয় মহাসড়কের মাঝে পায়রা নদী থাকায় যানবাহনগুলোকে ফেরি পারাপারের মাধ্যমে চলাচল করতে হয়। দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ উন্নয়নে বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কে লেবুখালীর পায়রা সেতুর নির্মাণের স্বপ্ন পূরণের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।
পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য কুয়েত সরকারের ৩৩৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা ঋণে মোট ৪১৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি অনুমোদন পায় ২০১২ সালের ৮ মে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে চার বছর আট মাসে প্রকল্প সমাপ্ত করার কথা। কিন্তু সেটা করতে পারেনি বাস্তবায়নকারী সংস্থা। দফায় দফায় পরিবর্তন করা হয় প্রকল্পটির নকশা। প্রকল্প অনুমোদনের পর উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) দুই দফা সংশোধনের পর মূল সেতুর ভিত্তির ডিজাইন পরিবর্তন, নদীতীর রক্ষাপ্রদ কাজের ডিজাইন পরিবর্তন, সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য বাড়ার কারণে সর্বশেষ ডিপিপি সংশোধন করা হয়। এখন ব্যয় বেড়ে এক হাজার ৪৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
আইএমইডি সচিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, সেতু নির্মাণকাজ শেষ হলে বিরাট একটি কাজ হবে। এতে দু’পাড়ের যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। কিন্তু প্রকল্পটি যথাসময়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এখন যেন প্রকল্পের নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হয়, তার জন্য দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, দু’বার ডিপিপি সংশোধন করে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে এক হাজার ৩৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। যা মূল ব্যয়ের চেয়ে ২৫০.১৮ শতাংশ বেশি। আর সময় বাড়ানো হয়েছে ৬৬ মাস। যা অনুমোদিত মেয়াদের চেয়ে ১১৬ শতাংশ বেশি। গত ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত মূল সেতুর অগ্রগতি ৮১ শতাংশ এবং প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬৯ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্পের আওতায় মূল কার্যক্রম ছিল এক হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্যের (ভায়াডাক্ট সেতু ৮৪০ মিটার এবং মূল সেতু ৬৩০ মিটার) ও ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার প্রস্থের চারলেন বিশিষ্ট সেতু নির্মাণ, এক হাজার ২৬৮ মিটার (বরিশাল প্রান্তে ৬১০ মিটার ও পটুয়াখালী প্রান্তে ৬৫৮ মিটার) সংযোগ সড়ক, এক হাজার ৪৭৫ মিটার তীর রক্ষাপ্রদ কাজ এবং কম্পিউটারাইজড টোল প্লাজা।
লক্ষ্য ছিল এই সেতু নির্মাণের মাধ্যমে পায়রা মহাসমুদ্রবন্দর ও কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রা ও অন্যতম প্রধান পর্যটন আকর্ষণ কুয়াকাটাসহ বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলের জেলাসমূহের সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপন সহজ হবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভ্যাট ও আইসিটি খাতে ব্যয় সমন্বয়ের জন্য ২০১৫ সালের ৩১ মে প্রকল্পর ব্যয় বাড়িয়ে সংশোধন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এতে খরচ বেড়ে হয় ৪১৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এখানে ব্যয় ১.২৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এর দু’বছর পর আবার সংশোধন করা হয়। পূর্ত কাজের চুক্তিমূল্য অনুযায়ী অতিরিক্ত ব্যয়, নতুন ঋণ চুক্তি প্রভৃতি বিষয় যুক্ত করে প্রকল্পের খরচ আটশ’ কোটি টাকা বাড়িয়ে এক হাজার ২৭৮ কেটি ৮২ লাখ টাকা করা হয় ২০১৭ সালের ২০ জুনে। এবার ব্যয় বৃদ্ধির হার ছিল ২০৯. ৪৩ শতাংশ। আর মেয়াদ বৃদ্ধির হার ৯১.২৩ শতাংশ। সংশোধনের ধারা অব্যাহত রেখে আবার ব্যয় বাড়ানো হয় ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। ব্যয় ২৫০.১৮ শতাংশ বাড়িয়ে ১ হাজার ৪৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা করা হয়। যেখানে কুয়েতি ঋণ এক হাজার ৭৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এবার মেয়াদ বাড়ে ১৬০ শতাংশ। মূল ডিপিপি’র তুলনায় দু’বার সংশোধন করে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে এক হাজার ৩৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। যা মূল ব্যয়ের চেয়ে ২৫০.১৮ শতাংশ বেশি। আর সময় বাড়ানো হয়েছে ৬৬ মাস। যা অনুমোদিত মেয়াদের চেয়ে ১১৬ ভাগ বেশি। গত ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত মূল সেতুর অগ্রগতি ৮১ শতাংশ এবং প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬৯ শতাংশ। প্রকল্পটি ২০২২ সালের জুনে সমাপ্ত করার কথা রয়েছে।