1. successrony@gmail.com : Mehedi Hasan Rony :
  2. arif_rashid@live.com : Arif Rashid : Arif Rashid
  3. meherunnesa3285@gmail.com : Meherun Nesa : Meherun Nesa
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০২:০৬ অপরাহ্ন

সাবেক এমপিকে ফোন— ‘স্যার ফিনিশ’

দিনলিপি নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২১ মে, ২০২১
  • ৪১৬ বার

রাজধানীর পল্লবীতে মো. সাহিনুদ্দিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার পরই আসামি সুমন লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আউয়ালকে ফোনে জানায়, ‘স্যার ফিনিশ’। বৃহস্পতিবার বিকেলে কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংস্থার পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) কমান্ডার আল মঈন সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের ৪-৫ দিন আগে রাজধানীর কলাবাগানে সাবেক এমপি আউয়াল তার ব্যক্তিগত অফিসে বসে সাহিনুদ্দিনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। হত্যার দায়িত্ব দেওয়া হয় সুমনকে। এম এ আউয়াল ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান ও তরীকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব।

সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, দুই তরুণ দুই পাশ থেকে এক ব্যক্তিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাচ্ছেন। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি মাটিতে লুটে পড়েন। এরপর হামলাকারী একজন চলে যান। অপরজন ওই ব্যক্তির ঘাড়ে কোপাতে থাকেন মৃত্যু হওয়া পর্যন্ত।

রোমহর্ষ এ ঘটনা ঘটে গত রোববার বিকেলে রাজধানীর পল্লবীর ডি–ব্লকের ৩১ নম্বর রোডে। খুন হওয়া ব্যক্তির নাম সাহিনুদ্দিন (৩৩)। তাঁর বাসা পল্লবীর বুড়িরটেক।

৩১ সেকেন্ডের ভিডিও ফুটেজে যে দুজন হামলাকারীকে দেখা গেছে, তাঁদের শনাক্ত করেছে র‌্যাব। একজনের নাম মানিক ও আরেকজন মনির। র‌্যাব বলছে, এ খুনের মূল পরিকল্পনাকারী লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সাংসদ ও তরীকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব এম এ আউয়াল। তাঁর নির্দেশে স্থানীয় সন্ত্রাসী মনির, মানিক, সুমন ব্যাপারী, হাসানসহ অন্যরা ৫ থেকে ৭ মিনিটের মধ্যে রামদা ও চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে সাহিনুদ্দিনকে হত্যা করেন। এরপর সুমন মুঠোফোনে সাবেক সাংসদ আউয়ালকে জানান, ‘স্যার, ফিনিশ’।

মুঠোফোনের কল রেকর্ড পরীক্ষা করে র‌্যাব এ তথ্য পেয়েছে বলে গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে। র‌্যাব বুধবার গভীর রাতে কিশোরগঞ্জরে ভৈরবে অভিযান চালিয়ে সাবেক সাংসদ আউয়ালকে (৫০) গ্রেপ্তার করে। এর আগের রাতে চাঁদপুরের হাইমচর থেকে হাসান (১৯) ও পটুয়াখালীর বাউফল থেকে জহিরুল ইসলাম ওরফে বাবুকে (২৭) গ্রেপ্তার করে। সুমন ব্যাপারীসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। এ নিয়ে ওই হত্যায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র‌্যাব বলছে, পল্লবী এলাকায় আউয়ালের আবাসন ও জমির ব্যবসা রয়েছে। সাহিনুদ্দিনের জমি দখল নিতে না পেরে তাঁকে ভাড়াটে খুনি দিয়ে হত্যা করা হয়।

এম এ আউয়াল তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব থাকাকালে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ১৪-দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে লক্ষ্মীপুর-১ আসনে নৌকা প্রতীকে সাংসদ হন। ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তাঁকে তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব পদ থেকে অব্যাহতি দিলে তিনি ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টি নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। তিনি এর চেয়ারম্যান।

সাহিনুদ্দিন গত রোববার বিকেলে ৭ বছরের ছেলে নিয়ে মোটরসাইকেলে ঘুরতে বের হন। তাঁর পূর্বপরিচিত সুমন ব্যাপারী ও টিটু মুঠোফোনে সাহিনুদ্দিনকে পল্লবীর ডি–ব্লকে ডাকেন জমিজমা নিয়ে বিবাদ মীমাংসার জন্য। সাহিনুদ্দিন সেখানে গেলে সুমন ব্যাপারী লাথি মেরে মোটরসাইকেল থেকে তাঁকে ফেলে দেন। এরপর ছেলের সামনেই তাঁকে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করে।

এ ঘটনায় সাহিনুদ্দিনের মা আকলিমা বেগম বাদী হয়ে সাবেক সাংসদ আউয়ালসহ ২০ জনের নাম উল্লেখ করে পল্লবী থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি বুধবার ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়।

সাহিনুদ্দিনের মা আকলিমা বেগম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের বুড়িরটেকে (আলীনগর) তাঁর ও তাঁদের স্বজনদের ১০ একর জমি রয়েছে। আশপাশের কিছু জমি দখল করে সেখানে হ্যাভেলি প্রোপার্টিজ ডেভেলপার লিমিটেড নামের আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলেন আউয়াল।

আকলিমা বেগমের অভিযোগ, তাঁদের জমি জবরদখলে ব্যর্থ হয়ে আউয়াল ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে সাহিনুদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন। তিনি বলেন, গত বছরের নভেম্বরেও সন্ত্রাসীরা সাহিনকে কুপিয়ে আহত করেছিল। সেই ঘটনায় করা মামলায় পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। উল্টো আউয়ালের দেওয়া মিথ্যা মামলায় সাহিনুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সপ্তাহখানেক আগে সাহিনুদ্দিন জামিনে মুক্তি পান।

সাবেক সাংসদ এম এ আউয়ালকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সাহিনুদ্দিনদের জমি দখলে ব্যর্থ হয়ে সাবেক সাংসদ আউয়ালের নির্দেশ ও পরিকল্পনায় এ খুনের ঘটনা ঘটে। ঘটনার চার-পাঁচ দিন আগে আউয়ালের কলাবাগান অফিসে আসামি তাহের ও সুমন চূড়ান্ত পরিকল্পনা করেন। পল্লবী এলাকার সন্ত্রাসী সুমনের নেতৃত্বে ১০-১২ জন হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। তাঁদের সহযোগী হিসেবে আরও কয়েকজন ছিলেন।

র‌্যাবের এই মুখপাত্র বলেন, আউয়াল জমি বেচাকেনা করতেন। সুমনের নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসী গ্রুপ দিয়ে তিনি জমি দখল ও আধিপত্য বিস্তার করতেন। সুমন আউয়ালের কাছ থেকে প্রতি মাসে ১০-১২ হাজার টাকা করে মাসোয়ারা পেতেন। ক্ষেত্রবিশেষে কাজ অনুযায়ী অতিরিক্ত টাকা পেতেন। সুমন এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, রিকশা টোকেন বাণিজ্য, মাদক, জুয়াসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাতেন। তাঁর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে পল্লবী থানায় অন্তত ছয়টি মামলা রয়েছে।

আউয়াল কেন সাহিনুদ্দিনকে হত্যা করিয়েছেন, এ প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, আউয়ালের সঙ্গে সাহিনুদ্দিনের জমি নিয়ে বনিবনা হচ্ছিল না। সাহিনুদ্দিনের পরিবারের অভিযোগ, এ হত্যার জন্য সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ৩০ লাখ টাকা চুক্তি করেছেন আউয়াল।

তবে এ অভিযোগের বিষয়ে আউয়ালের পক্ষে বা তাঁর পরিবারের কোনো ভাষ্য পাওয়া যায়নি।

এ জাতীয় আরো সংবাদ