দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে যা যা করা দরকার, আমরা তাই করছি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা দিয়েছিলাম। আজকে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। বর্তমান প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা স্মার্ট জনগোষ্ঠী হবে। দেশে স্মার্ট গভর্নমেন্ট হবে, স্মার্ট ইকোনমিক হবে, স্মার্ট সোসাইটি হবে; সেভাবেই দেশকে গড়ে তোলার পরিকল্পনা আমরা হাতে নিয়েছি। আগামী প্রজন্মের পর প্রজন্মরা যেন উন্নত জীবন নিয়ে বাঁচতে পারে সেজন্য ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ হাতে নেওয়া হয়েছে। দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যা যা করা দরকার, আমরা তাই করছি।
রবিবার (২৯ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধুকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ (মরণোত্তর) ডিগ্রি প্রদানে ঢাবির বিশেষ সমাবর্তনে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অনেক রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে। এই স্বাধীনতার সুফল দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে আমরা পৌঁছে দেব। দেশে একটি মানুষ ভূমিহীন, গৃহহীন, অন্ধকারে থাকবে না। প্রতিটি ঘরেই আলো জ্বলবে, ঠিকানাহীনদের ঠিকানা দেব।
তিনি বলেন, ১৫ বছর ধরে আমরা সরকার ক্ষমতায় আছি। ২০০৯ সাল থেকে আজকে ২০২৩, এটি এখন এক বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আজকের ছাত্র-ছাত্রীরা উপলব্ধি করতে পারবে না ২০ বছর আগে বাংলাদেশ কেমন ছিল। সেখানে ক্ষুধা-দারিদ্র্য ছিল, বৈজ্ঞানিক কোনো কিছু ছিল না। আমরা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে বিজ্ঞান ও কম্পিউটার শিক্ষা চালু করি। শিক্ষার্থীদের কাছে এটি আমার আহ্বান থাকবে, আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের মধ্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমার যতটুকু করার আমি করে যাচ্ছি কিন্তু বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা যেন থেমে না যায়, এটিই আমার কথা।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার করা রিপোর্ট খণ্ডাকারে প্রকাশ করা হচ্ছে। যেগুলো বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় জানতে সহায়তা করবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার ১৯৪৮ সাল থেকে প্রতিদিন তার বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থা রিপোর্ট করত। সেই রিপোর্টগুলো ১৯৯৬ সালে প্রথম যখন সরকার গঠন করি, তখন সংগ্রহ করি। এগুলো এখন প্রকাশ করা শুরু করেছি। ইতোমধ্যে ১২ খণ্ড হয়ে গেছে। ১৩ নম্বর খণ্ড ছাপায় চলে গেছে, ১৪টিও চলে গেছে। এখানে প্রায় ৪৫ হাজার পেপার ছিল। প্রয়াত বেবি মওদুদ ও আমি প্রায় ১৯ থেকে ২০ বছর এটি নিয়ে কাজ করি। যেহেতু এগুলো গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট সেক্ষেত্রে এসবির একটি টিম করে দেয়। সেই সঙ্গে জেলায় জেলায় বঙ্গবন্ধুর সব ভাষণও সংগ্রহ করা হয়। সবগুলো নিয়ে আমরা ডকুমেন্টস প্রকাশ করেছি।
তিনি বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে হয়তো কখনো কোনো নেতার বিরুদ্ধে কোনো গোয়েন্দা সংস্থার রির্পোট আজ পর্যন্ত প্রকাশ হয়নি। বিশ্বে হয়তো এটিই প্রথম হবে। এই গোয়েন্দা রিপোর্টই বাংলাদেশের ইতিহাস। এই গোয়েন্দা রিপোর্টটা পড়লে কীভাবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছে তা জানা যাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে আমার আহ্বান ও অনুরোধ থাকবে আপনারা গবেষণার দিকে বিশেষ নজর দেবেন। তা হলেই বাংলাদেশকে আরও অর্থনৈতিকভাবে উন্নত করা যাবে এবং আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে সেই গৌরব ফিরে পাবে।
বক্তব্য শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর শেষ না করার আফসোস জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমি আবার যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হতে পারতাম এবং মাস্টার্স ডিগ্রিটা শেষ করতে পারতাম তা হলে খুব খুশি হতাম। পৃথিবীর অনেক দেশের অনেক ডিগ্রি পেয়েছি তাতে মন ভরে না। নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে পেলাম না। অবশ্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক একটি ডিগ্রি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু লেখাপড়া করে ডিগ্রি (মাস্টার্স) নিতে পারলে ভালো হতো।
বিশেষ সমাবর্তন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা, কর্মচারী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কূটনীতিবিদ, অ্যালামনাইসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।