চীনের উহান থেকে দেশে ফিরেছেন ৩১৬ বাংলাদেশি। করোনাসভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করায় তাদের দেশে ফেরত আনা হয়েছে।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) একটি বিশেষ বিমানে দুপুর বারোটার দিকে তাদের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করানো হয়। এর আগে বাংলাদেশ সময় সকাল পৌনে ৮টায় বিমানটি চীনের উহান থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেয়।
জানা গেছে, এদের মধ্যে জ্বর থাকায় ৮ জনকে নেওয়া হচ্ছে কুর্মিটোলা হাসপাতালে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ জানিয়েছেন, যাত্রীদের মধ্যে ৮ জনের একটু বেশি জ্বর থাকায় তাদেরকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
এর আগে, শুক্রবার বিকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ চিনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছে। অন্যদিকে, চীনা কর্তৃপক্ষ উহান অঞ্চলের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রী সহ অনান্য বাংলাদেশি নাগরিকদের উহান বিমান বন্দরে নিয়ে এসে একত্র করছে।
এ বিষয়ে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানান, চীন থেকে দেশে ফিরতে ১৯টি পরিবার, ১৮ শিশু এবং দুই বছরের কম বয়সী দুই শিশুসহ ৩৬১ জন নিবন্ধন করেছেন।
এদিকে, দেশে ফিরতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরির সঙ্গে যুক্ত গবেষক ড. রেজা সুলতানুজ্জামান জানান, উহানের ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২১টি থেকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ফেরত আসছেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাসে করে শিক্ষার্থীরা উহানের তিয়ানহি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের পৌঁছাতে শুরু করেছেন। স্থানীয় সময় রাত ১২টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা) ফ্লাইট ছাড়ার কথা।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের ডিজিএম তাহেরা খন্দকার বলেন, “যে উড়োজাহাজ রওনা হয়েছে তাতে আসন আছে ৪১৯টি। বাংলাদেশ সময় রাত ২টায় তারা ঢাকায় পৌঁছাবেন বলে আমরা আশা করছি।”
উহানের হুবেই ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিরে শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান জানান, শুক্রবার দুপুরে চীনের বাংলাদেশ দূতাবাসের ব্যবস্থাপনায় তাদের বাসে করে এয়ারপোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়।
উহানের হুবেই ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে বাসে করে বিমানবন্দরের পথে রওনা হওয়ার আগে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাউহানের হুবেই ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে বাসে করে বিমানবন্দরের পথে রওনা হওয়ার আগে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা বলেন “আমাদের ইউনিভার্সিটিতে বাংলাদেশি আছে ১৩৭ জন, আমরা সবাই আসছি। রওনা হওয়ার আগে আমাদের সবার শরীরের তাপমাত্রা মাপা হয়েছে।”
উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। বিশ্বের দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে মরণঘাতী এ ভাইরাস। বিশ্বজুড়ে এখন সবচে আলোচিত ও আতঙ্ককর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এটি। চীনে করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫৯ জনে। এ ঘটনায় গত বুধবার জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র উহান শহর থেকে তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নিচ্ছে। সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এখন পর্যন্ত ১১ হাজার। চীন ছাপিয়ে এই রোগ এখন বিশ্বের অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ছে।
এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে চীন, থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম, হংকং, সিঙ্গাপুর, ভারত, মালয়েশিয়া, নেপাল, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং তাইওয়ান রয়েছে। সর্বশেষ ইসরায়েলেও এক রোগীর শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই ব্যক্তিও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত।